মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নদীর ভাঙনে দারিদ্র্য ঘুরছে চক্রাকারে

প্রকাশিত : ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ, ২২ অক্টোবর ২০২৩ রবিবার ১০১ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

কুড়িগ্রাম শহরে নেমে তেমন চাকচিক্য চোখে পড়ল না। অনেকটা শান্ত নদীর মতো। দুই দশক আগে দোকানপাটের চেহারা যেমন ছিল, এখনো প্রায় তেমনই আছে। দেশের অন্য যে কোনো জেলা শহর থেকে আলাদা। রিকশা ভাড়া কম। খরচ কম খাবারে। মানুষের আয় কম। তাই জীবনযাত্রার ব্যয়ও কম অন্য জেলা শহরের তুলনায়। ভাওয়াইয়ার তীর্থভূমি ছোট্ট এই শহরে সংস্কৃতির চর্চা এখনো আছে। তবে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাদকের ব্যবহার। তরুণসমাজে এর আসক্তি বাড়ছে। কুড়িগ্রাম শহরে শোভা পাচ্ছে সরকারের উন্নয়ন ফিরিস্তি সংবলিত ফেস্টুন। রৌমারী স্থলবন্দরে আমদানি করা পাথর ভাঙাসহ অন্যান্য কাজে মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ফেস্টুনে লেখা আছে-তিস্তা ও ধরলা নদীর ওপর দুটি সেতু নির্মাণ, সোনাহাট স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দর উন্নয়ন, কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গমারী-সোনাহাট ফোর লেন সড়ক, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি। উন্নয়নের ফলে মানুষের কর্মচাঞ্চল্য সামান্য বেড়েছে। মঙ্গা তথা অভাবের জেলা হিসাবে পরিচিত কুড়িগ্রামে এখন মঙ্গা না থাকলেও দারিদ্র্য এখানে চক্রাকারে ঘুরছে। কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে বসে কথা হচ্ছিল স্থানীয় সাংবাদিক আহসান হাবীব নীলুর সঙ্গে। প্রেস ক্লাবটা বেশ জীর্ণ। জেলা শহরের প্রেস ক্লাব আরও উন্নত অবকাঠামোর প্রয়োজন ছিল। নীলুর কাছে প্রশ্ন, দারিদ্র্য কেন কমছে না? নীলু বললেন, দারিদ্র্য একদমই কমছে না এমন নয়। আগে অনেক সময় মানুষ খেতে পারত না। মঙ্গা ছিল নিত্যসঙ্গী। এখন মানুষের খাবারের অভাব তেমন না থাকলেও প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব রয়েছে।

কুড়িগ্রাম দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত জেলা। দারিদ্র্যের হার প্রায় প্রায় ৭০ শতাংশ। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থাকলেও দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। এর কারণ কী? এককথায় নীলুর জবাব-নদীভাঙন। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ছোট-বড় ১৬টি নদী কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। চরাঞ্চল বেশি। শিল্প-কলকারখানা নেই। মানুষের কর্মসংস্থান নেই। প্রতিবছর তিন হাজার পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। দারিদ্র্যের প্রধান কারণ নদীভাঙন।

রৌমারীর উদ্দেশে কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে মাইক্রোবাসে রওয়ানা দিলাম সকাল ৮টায়। উলিপুর হয়ে চিলমারী বন্দরে পৌঁছতে লাগল প্রায় এক ঘণ্টা। এ সেই বিখ্যাত চিলমারী বন্দর। ভাওয়াইয়া গান-ও কি গাড়িয়াল ভাই / হাঁকাও গাড়ি চিলমারী বন্দরে। চিলমারী একটি বাণিজ্যিক অঞ্চল। ঘাটে ঘাটে বালুর স্তূপ। বন্দরে সারিবদ্ধ ট্রাক। ফেরি চলে সময় বেঁধে। নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দেওয়ার জন্য রওয়ানা দিলাম। শীতল বাতাস। নদীর বাতাসে ভাবের উদয় হয়। কিছু দূর এগোলে চর চোখে পড়ল। নদীর বুকে অনেক মাছ ধরার নৌকা জাল পেতে বসে আছে। ইলিশ রক্ষায় এ সময়টায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ। নৌকার মাঝি আমাদের জানালেন, মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযান চালায়। তবে পুলিশকে মাছ দিলে জাল ফেরত দেয়। দুই ঘণ্টা চলার পর হঠাৎ নৌকা চরে আটকে গেল। মাঝিরা মাঝ নদীর ডুবোচরে নামলেন। কারও হাঁটুসমান, কারও কোমরসমান পানি। ওপর থেকে বোঝার উপায় নেই নিচে চর আছে। প্যাসেস অনুমান করে নৌকা চলে। কসরত চলছে; কিন্তু নৌকা কিছুতেই চলছে না। নৌকায় অনেক শিশু ও নারী। গরমে তাদের ত্রাহি অবস্থা। মাঝিরা লগি-বৈঠা নিয়ে চেষ্টা চালান। আধা ঘণ্টার বেশি প্রাণান্ত চেষ্টার পর নৌকা চলতে শুরু করে। এতে যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি নামে। তখনই মনে হচ্ছিল ব্রহ্মপুত্রের ওপর একটি সেতু হলে ভালো হতো। চিলমারী থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা ইঞ্জিন চলার পর রৌমারী ঘাটে ভিড়ল নৌকা।

রৌমারী পৌঁছার পর একই প্রশ্ন, দারিদ্র্য এখানে বেশি কেন? সবার জবাব একটাই-দুর্গম এলাকা। বেসরকারি বিনিয়োগ সম্ভব নয়। সরকার পিছিয়ে পড়া জেলা হিসাবে আগ্রাধিকারমূলক বিনিয়োগ করলে উন্নয়ন বৈষম্য দূর হবে। যোগাযোগব্যবস্থা দুর্গম হওয়ায় পণ্যের প্রকৃত দাম পান না কৃষক। নদীভাঙনে মানুষ বারবার নিঃস্ব হচ্ছে। শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক অতিরিক্ত সরকারি বরাদ্দ ছাড়া অবহেলিত এই জনপদকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT