শুক্রবার ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন এডিপিতেও থাকবে ব্যয় সংকোচন নীতি

প্রকাশিত : ০৫:০৯ পূর্বাহ্ণ, ৯ এপ্রিল ২০২৩ রবিবার ১৫৪ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও ব্যয় সংকোচনের নীতি থাকবে। অপরিহার্য না হলে নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। এই অর্থবছরে মতো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। ডলার সংকটের কারণে এডিপি বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হবে বিদেশি ঋণ সংগ্রহের ওপর। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বৈরী পরিস্থিতিতে এই অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি নেয় সরকার। ৮১টির অর্থছাড় সম্পূর্ণ স্থগিত করা হয়। ২৫ শতাংশ অর্থছাড় স্থগিত করা হয় ৬৩৬টি প্রকল্পের। এ কারণে গেল জানুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে কম। এ পরিস্থিতিতে সংশোধিত এডিপিতে ফাস্টট্র্যাকভুক্ত এবং বিভিন্ন বড় প্রকল্পের বরাদ্দেও কাটছাঁট করা হয়।

আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্প প্রস্তাবের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন কিছু নির্দেশনা দিয়েছে গত মার্চে। এতে বলা হয়, নতুন প্রকল্প নেওয়ার চেয়ে চলমান প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় একান্ত অপরিহার্য এবং উচ্চ অগ্রাধিকার না হলে সরকারি অর্থায়নের নতুন প্রকল্প নেওয়া যাবে না। তবে বৈদেশিক ঋণের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে– এমন নতুন প্রকল্প ও বরাদ্দে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খাদ্য নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গত ১ মার্চের একনেক সভায় এই অর্থবছর সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প কোনোভাবেই আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিশনের নির্দেশনায় সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, বরাদ্দ দেওয়া অর্থও খরচ করা সম্ভব হয় না। ব্যবস্থাপনা সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ আরও কিছু কারণে উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না। এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। তাঁর মতে, রাজস্ব আয় তেমন বাড়ানো যাচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক কিছুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ফলে অর্থ সংকটের মধ্যে এডিপিতে বাস্তবায়ন অযোগ্য বরাদ্দের যুক্তি থাকতে পারে না। যতটুকু বরাদ্দ, তা যেন যথাযথ মানে এবং যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয়– সেদিকেই গুরুত্ব দেবে সরকার।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যয় সংকোচন নীতির মধ্যেও অপব্যয় ও অপচয় কমানোর মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অন্তত বড় প্রকল্পগুলোর নির্মাণ শেষ করা দরকার। পরিস্থিতি অনুযায়ী বিদেশি ঋণের প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়ার সরকারি কৌশল ঠিকই আছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। কয়েক দফা বৈঠক করেছেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে প্রকল্প-সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বরাদ্দ-সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে। এডিপি প্রণয়নের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্য অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার কিছুটা ছোট হতে পারে। মে মাসের প্রথম দিকে আগামী অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন হতে পারে।

সাধারণত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এডিপি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এএমএস) মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়ে থাকে। প্রস্তাবে প্রকল্পের বরাদ্দ ও প্রকল্প নেওয়ার ব্যাখ্যা থাকে। পরিকল্পনা বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই-বাছাই এবং প্রয়োজনে সংশোধন করে কার্যক্রম বিভাগে পাঠায়। কার্যক্রম বিভাগের মাধ্যমে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে যায়। অর্থ বিভাগের মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি সার্বিক পরিস্থিতি এবং সরকারের উন্নয়ন দর্শনের ভিত্তিতে এডিপির আকার নির্ধারণ করে পরিকল্পনা কমিশনকে জানায়। দুই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) উপস্থাপনার জন্য উত্থাপন করা হয়। একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনইসি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

গত বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার-সংক্রান্ত কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আয় ও ব্যয়ের প্রাক্কলন অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী নতুন এডিপির প্রস্তাবিত আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে মাত্র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এ প্রস্তাব পরে সংশোধন হতে পারে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT