বুধবার ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্রুত নির্বাচন চায় বিদেশিরা

প্রকাশিত : ০৮:২২ পূর্বাহ্ণ, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার ৮৬ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নিয়েই নতুন সরকার নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর জোর দেয়। বিগত চারটি নির্বাচনের মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গত তিন নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে এর আগে ওঠা বিতর্কের বিষয়ে জোর দেয় সরকার।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে একাধিক কমিশন করেছে সরকার। এর মধ্যে সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংস্কার কমিটির সঙ্গে নির্বাচনের বিষয় সরাসরি যুক্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর থেকেই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা দেখা দেয়। বিশেষ করে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন ঘিরে শুধু দেশেই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকেও নানামুখী চাপ আসে।

ফলে ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশিরভাগ দেশই সরকারের সংস্কার পদ্ধতির জোর সমর্থন দেয়। হাসিনা সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে সরকারকে সমর্থন করে। তবে আন্তর্জাতিক মহল শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের কথা বলে। সংস্কার ইস্যুতে সরকারের সময় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিদেশিরা। প্রয়োজনীয় সময়ের পক্ষেই ছিল তাদের অবস্থান। কিন্তু দুই মাস ধরেই সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে আলাপ-আলোচনা জোরালো হচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেনের দলের পরাজয়ের পর থেকে বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের সঙ্গে ভারতের আলোচনা বাড়ে। এর আগে বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের প্রতি বারবার ভারতের আগ্রহই বেশি দেখা গেছে। শেখ হাসিনা ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লির ক‚টনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও ওয়াশিংটন মাথা ঘামায়নি। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা করেছে বলে জানান ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি।

এ ছাড়া আঞ্চলিক দুই প্রভাবশালী দেশ ভারত, চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষ দেশের বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহের বিষয়টি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিদেশিদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আগ্রহের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর মন্তব্যে। গত সোমবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক নিয়ে নির্বাচিত সরকারের সময় কথা হওয়া উচিত।’ যদিও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার মতো তিনি যথাযথ লোক নন।

গত শনিবার কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্যে দিয়ে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির বক্তব্যের দুদিন পর ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে ঘিরে আলোচনা শুরু হয়।

ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত সময়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত আলোচনা করেছে। সম্প্রতি দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়, যেখানে বাংলাদেশে সম্ভাব্য নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে: সালাহউদ্দিনজুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে: সালাহউদ্দিন
এদিকে নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে বিএনপিসহ অংশীজনদের কী অবস্থান, তা জানতে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার গত রবিবার বিএনপি ও অন্য দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। একই সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত গত সোমবার বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন।

নির্বাচনে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশে কাজ শুরু করছে। ইউএনডিপির একটি প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছে।

নির্বাচনে সহায়তা চেয়ে নির্বাচন কমিশন জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছিল, এটি জানিয়ে ঢাকায় সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে কী সহায়তা প্রয়োজন, তা মূল্যায়ন করা হবে। এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে ইউএনডিপি কী সহায়তা দিতে পারে, তা জানানো হবে। ফলে বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা চাপ বিদেশিদের পক্ষ থেকে তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শনিবার কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেন, ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা অজিত দোভালের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে আলোচনা হয় এবং এ ক্ষেত্রে দুই দেশ কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে কথা হয়।

এরিক গারসেটি আরও জানান, তিনি নিজে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল, উন্নয়নমুখী এবং সহনশীল দেশ হিসেবে দেখতে চাই।’

বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি জানিয়েছেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সম্প্রতি ভারত সফরে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নতুন প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ রাখছে।

গারসেটি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত কোনো গণতন্ত্রই নিচ্ছিদ্র নয়। বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের মতো গণতন্ত্রেরও পরিচর্যা করতে হয়। তবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পার্থক্য প্রসঙ্গে গারসেটি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে থাকেন, ‘আমেরিকার বিষয়ে উনি কথা বলবেন না, আমেরিকাও ভারতের বিষয়ে কিছু বলবে না। আমি কিন্তু বলব— উভয়ই উভয়ের বিষয়ে কথা বলুক। সব দেশেরই অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকে। সম্পর্ক অন্তরঙ্গ হলে খোলা মনে আরও কথা বলা যায়।’

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT