সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ঋণের চাহিদা বাড়ায় এবং ব্যাংকে তারল্য কমায় সুদের হার বাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সব ধরনের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার বেড়েছে।
একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নীতিনির্ধারণী সুদের হারও বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে ঋণ ও আমানতের সুদের হারও কিছুটা বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
জুলাই থেকে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হবে। ফলে এ হার তখন আরও বেড়ে যাবে। কারণ, ব্যাংকে এখন তারল্য সংকট প্রকট। তারল্যের জোগান বাড়াতে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার বাড়াবে। একই সঙ্গে বাড়বে ঋণের সুদের হারও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় বিভিন্ন ধরনের ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রি করে। গত নয় মাসে এসব বিল-বন্ডের সুদের হার গড়ে দেড় থেকে ২ শতাংশ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিনির্ধারণী সুদের হারও বাড়িয়েছে।
পাশাপাশি ব্যাংকগুলোয় নগদ অর্থের চাহিদা বৃদ্ধি ও জোগানে ঘাটতি থাকায় কলমানির ওপর চাপ বেড়েছে। এতে কলমানির সুদের হারও বেড়ে গেছে। সব মিলে সুদের হারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগাম ঘোষণা দিয়েছে আগামী মুদ্রানীতির মাধ্যমে ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হবে। বর্তমানে ঋণের সুদের হারের যে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে, তা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হবে। এতে ঋণের সুদের হারও বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে বাড়বে আমানতের সুদহার। তখন ট্রেজারি বিল বন্ডের সুদহার আরও বাড়বে। এতে সরকারের ঋণ গ্রহণের খরচও বেড়ে যাবে, যা মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
বর্তমানে সরকারের ঋণ গ্রহণের জন্য তিন ধরনের বিল ও চার ধরনের বন্ড রয়েছে। এগুলো হচ্ছে তিন মাস, ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিল।
এছাড়া ২, ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সরকার ট্রেজারি বন্ড রয়েছে। এগুলোর নিলাম করে সরকার প্রতিনিয়ত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করে। এগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব গ্রাহক সরকারি বিল ও বন্ড কেনার প্রতি আগ্রহ দেখায় না। যে কারণে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন হচ্ছে না।
গত জুনে তিন মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদের হার জুনে ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ, জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশে, মার্চে আবার সামান্য কমে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ হয়েছে। ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলে সুদহার জুনে ছিল ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জানুয়ারি তা বেড়ে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়। মার্চে তা সামান্য কমে ৭ দশমিক ০১ শতাংশে নেমে যায়।
এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদের হার জুনে ছিল ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। জানুয়ারিতে তা বেড়ে ৮ শতাংশ হয়। মার্চে তা সামান্য কমে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে যায়।
ট্রেজারি বন্ডগুলোর মধ্যে ২ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সরকার ট্রেজারি বিলের সুদ জুনে ছিল ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে ৮ দশমিক ০৮ শতাংশে ওঠে। মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদ জুনে ছিল ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। জানুয়ারিতে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। মার্চে তা কমে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ হয়। ১০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সরকার ট্রেজারি বন্ডের সুদ জুনে ছিল ৮ দশমিক ০৩ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়।
অর্থনৈতিক মন্দায় সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় সরকারের ব্যয় বেড়েছে। ব্যয়ের তুলনায় আয় কম হওয়ায় ঘাটতি বেড়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সরকারের ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
সরকার বেশি ঋণ নেওয়ায় এবং ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটে বিল-বন্ড কেনার প্রতি আগ্রহ কম থাকায় ট্রেজারি বন্ড ও বিলের সুদের হার বেড়ে গেছে।
প্রকাশক মোঃ সোহেল রানা ও সম্পাদক: মোঃ মোজাম্মেল হক। ২৭, কমরেড রওসন আলী রোড, বজলুর মোড়, কুষ্টিয়া-৭০০০।
© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | Design and Developed by- DONET IT