গাজীপুরে আজমত উল্লা ও জাহাঙ্গীরের দিকে সবার নজর
প্রকাশিত : ০৬:০৯ পূর্বাহ্ণ, ৭ মে ২০২৩ রবিবার ১২৭ বার পঠিত
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান আজ হাজির হচ্ছেন নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কমিশনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে তাকে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত গাজীপুরের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম তার প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন নিয়ে হাজির হচ্ছেন উচ্চ আদালতে। ফলে গাজীপুর সিটির ভোটারদের নজর এখন এ দুজনের দিকে। তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা জানার জন্য অপেক্ষায় আছেন সিটির ভোটাররা।
এদিকে নির্বাচনে দুজনের গতি যেদিকেই গড়াক-অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। তিনি শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরের ছয়দানার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি বলেন, আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে একটা মিথ্যা ও ভুয়া কথায় ফেলে ১৮ মাস স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। সবকিছু লুটপাট করে নিয়েছে। এ কারণে আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি। দেখি আল্লাহপাকের ইচ্ছায় কী হয়। জনগণ আমাদের কেমন ভালোবাসেন।
তিনি বলেন, আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি, আমার ছেলে যে কাজগুলো করেছে, আমি তার পথ ধরেই কাজ করব। যেসব কাজ অসমাপ্ত হয়ে পড়ে আছে, নির্বাচিত হতে পারলে আমি ছেলেকে নিয়ে ওই অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার চেষ্টা করব। জনগণ কেন আপনাকে ভোট দেবে-এমন প্রশ্নে জায়েদা খাতুন বলেন, জনগণ আমাদের পাশে আছে। যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, যদি কোনো প্রকার কারচুপি না হয়, তবে দেখবেন-সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের জনগণই আমার সঙ্গে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমি সবার সঙ্গে যোগাযোযোগ রাখব। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাব। নিজে গিয়ে ভোট চাইব।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি ভঙ্গের দেওয়া চিঠির বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, আমি প্রকাশ্যে মাইক নিয়ে কোনো মিটিং-মিছিল করিনি। ইনডোর মিটিং করেছি। এটা কোনো নির্বাচনি মিটিং ছিল না। এটি ছিল আমাদের সাংগঠনিক এবং রুটিন ওয়ার্ক। প্রতিমাসেই আওয়ামী লীগের যেমন সভা হয়ে থাকে, এটিও ছিল ওই ধরনের একটি বর্ধিত সভা। বর্ধিত সভায় শুধু আওয়ামী লীগ নয়, আমাদের সহযোগী সংগঠনের নেতারাও থাকেন। আমরা কোনো নির্বাচনি প্রচারণা সভা করিনি।
অপরদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজ বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, কতিপয় ব্যক্তি ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করে আমার ক্ষতি করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে বিতর্কে ফেলেছে। তিনি বলেন, আয়তনে অনেক বড় হলেও গাজীপুর একটি নবীন সিটি করপোরেশন। দুটি পৌরসভা এবং কয়েকটি ইউনিয়নের কিছু গ্রাম ও শহর নিয়ে এ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়েছে। ২০১৩ সালের প্রথম নির্বাচনে অধ্যাপক এমএ মান্নান নির্বাচিত হয়ে কাজ করতে পারেননি। কেন তিনি কাজ করতে পারেননি, সেটি নগরবাসী খুব ভালোভাবেই জানেন। দ্বিতীয় নির্বাচনে আমি জয়ী হয়ে গ্রামকে শহর বানানোর জন্য কাজ শুরু করি। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত শহর ঘুরে একটি বিশেষজ্ঞ দলের সমন্বয়ে আমি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে কাজটা শুরু করি। প্রথম পর্যায়ে আমি প্রায় ৮শ কিলোমিটার ড্রেনেজসহ রাস্তা নির্মাণ করি। কিন্তু ৩ বছরের মাথায় কতিপয় লোক প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা বানোয়াট, মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে বিতর্কিত করেছে। আমাকে ধ্বংস করার জন্য তারা মাঠে নেমেছে। তারা আমাকে এবং এ শহরটাকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, নগরবাসীকে নিয়ে আজ আমি এ শহরটাকে রক্ষা করতে চাই। কারণ, এ শহর সবার।
তিনি আরও বলেন, ‘মা যেহেতু এখানে প্রার্থী হয়েছেন, মাকে নিয়েই আমি লড়তে চাই। তাই শহরবাসীকে বলব, আমাকে ভোট দেওয়া আর মাকে ভোট দেওয়া একই কথা। মা আমার অভিভাবক, তিনি নগরেরও অভিভাবক (গার্ডিয়ান) হতে চান। সন্তান হিসাবে আমি মায়ের কাছে যেমন নিরাপদ, তেমনই আমি মনে করি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনও আমার মায়ের কাছে নিরাপদ থাকবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমার কাছে একটি শ্রদ্ধার জায়গা। প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে একটি শ্রদ্ধার জায়গা। ঠিক তেমনই নৌকা প্রতীকও আমার কাছে একটি শ্রদ্ধার জায়গা। কিন্তু গাজীপুর সিটিতে যে ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সেই ব্যক্তি আমাদের এ শহরটাকে নিরাপদ রাখবে না। আমি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে না, আমি সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাকে নিয়ে দাঁড়িয়েছি।’
ঋণখেলাপির দায়ে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আজ হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। অপরদিকে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আজমত উল্লা খানকে সশরীরে উপস্থিত থেকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন।
আজমত উল্লা খান যদি ইসির কাছে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন, তবে পরিস্থিতি অন্যরকমও হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে জাহাঙ্গীর আলম হাইকোর্টের আদেশে যদি প্রার্থিতা ফিরে পান, তবে পরিবেশ হবে একরকম। যদি না পান তবে হবে আরেকরকম-স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন মন্তব্যই পাওয়া গেছে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।