রবিবার ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
◈ গণভোট ইস্যুতে মুখোমুখি বিএনপি-জামায়াত ◈ শাহজালালে যাত্রীর পাকস্থলীতে মিলল ৬৩৭৮ ইয়াবা ◈ চলতি বছর স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৫০ বার, কমেছে কত বার? ◈ সকাল ৯টার মধ্যে ঢাকাসহ যেসব জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস ◈ বিএনপির একজন নেতার চাঁদাবাজির টাকা দিয়েই গণভোট আয়োজন সম্ভব: পাটওয়ারী ◈ ঢাকায় জুলাইযোদ্ধা শাফিনের রহস্যজনক মৃত্যু ◈ জামায়াত নিষিদ্ধে আলালের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানালেন আবদুল হালিম ◈ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বোঝাপড়া হচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি: পাটওয়ারী ◈ জামায়াত-বিএনপি ও এনসিপির কাঠামোর মধ্যে নির্বাচন সম্ভব নয়: জাপা মহাসচিব ◈ নির্বাচন কমিশন ভাগাভাগি হয়ে গেছে: হাসনাত

গাছে লেগে থাকা মাটির সূত্র ধরে জোড়া খুনের রহস্যভেদ

প্রকাশিত : ০৬:০৭ অপরাহ্ণ, ১১ জুলাই ২০২২ সোমবার ২০১ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

ধারের টাকায় আইপিএল ক্রিকেটে জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হন মো. সাদিকুর ওরফে সাদি নামে এক যুবক। পাওনাদারদের চাপে তার অবস্থা ছিল পাগলপ্রায়। এমন সময় তিনি প্রতিবেশী ভাবি রাজিয়া সুলতানা ওরফে কাকুলির কাছে টাকা ধার চাইতে যান। টাকা না পেয়ে তার চোখ পড়ে ভাবির স্বর্ণের অলঙ্কারের ওপর। এ কারণেই তিনি কাকুলি ও তার শিশু সন্তান তালহাকে (০৮) গলাকেটে হত্যা করেন।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ব্রাহ্মনদী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দি এলাকার লোমহর্ষক এ জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত সাদিকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর আগে গত ৯ জুলাই তাকে নিজের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় লুট করে নেওয়া স্বর্ণালঙ্কারও।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সুপারি গাছে লেগে থাকা মাটি দেখে সন্দেহ হওয়ায় এর সূত্র ধরে তদন্তে বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ঘটনা।

গত ৩ জুলাই ভোরে ঘরের ভেতরে কাকুলি ও তার ছেলের রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় আড়াইহাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন স্বজনরা। ঘটনার পর থেকেই পিবিআই নারায়ণগঞ্জ মামলার রহস্য উদঘাটন এবং আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা শুরু করে।

৯ জুলাই মামলার দায়িত্ব নেওয়ার দিনই পিবিআই নারায়ণগঞ্জ ইউনিটের ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাকিল হোসেন ও এএসআই মাজহারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

একপর্যায়ে তারা মৃতের বসতঘরের পেছনের দেয়ালের সঙ্গে লাগানো সুপারি গাছের গোড়া থেকে আনুমানিক দুই ফুট ওপরে এক জায়গায় সদ্য মাটি লাগানো দেখতে পান। তদন্তকারী দল লক্ষ্য করে গাছে কোনো সুপারি নেই। বিষয়টি তদন্ত দলের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। পিবিআই স্থানীয় সোর্সের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারে, বাড়ির পেছনে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ থাকায় কাকুলির ভাসুরের কিশোর ছেলে অজিদ কাজীসহ কয়েকজন সেখানে বসে মোবাইলে নেট ব্রাউজ করে। এরপর অজিদকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ২ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে সে মৃতের বাড়ির পেছনের দেয়াল ঘেঁষে বসে মোবাইল ফোনে গেম খেলার সময় হঠাৎ তালহার চিৎকার শুনতে পায়। তখন সে বাথরুমে কারও হাত ধোয়ার শব্দও শুনতে পায়। সন্দেহ হলে সে বাড়ির পেছনের দেয়ালের পাশে থাকা সুপারি গাছ বেয়ে উঠে বাথরুমের ভেনটিলেটর দিয়ে উঁকি দিয়ে প্রতিবেশী যুবক সাদিকে বাথরুমে দেখতে পায়। সাদি বের হয়ে যাওয়ার সময় ঘরের পেছনে অজিদকে বসে থাকতে দেখে। অজিদ ভেবে নেয়, তার কাকির (কাকুলি) সঙ্গে সাদির অবৈধ সম্পর্ক আছে। পরদিন সকালে হত্যার ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর সাদিকুর তার (অজিদ) সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘আমার কথা কাউকে বললে তোরে জানে মেরে ফেলব’। এই ভয়ে সে ঘটনা চেপে যায়।

এসব তথ্য পাওয়া মাত্রই পিবিআই সাদিকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জোড়া খুনের দায় স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি জানান, তিনি স্থানীয় সাকিব নিটওয়্যারে ফিটার ম্যান পদে চাকরি করেন। বেশ কিছু টাকা ধার করে আইপিএলে জুয়া খেলে সব হারান। পরে পাওনাদারদের চাপে তার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। তখন তিনি পাগলের মতো টাকা খুঁজতে থাকেন। এরমধ্যে তিনি জানতে পারেন, প্রতিবেশী কাকুলির কাছে বেশ টাকা পয়সা আছে এবং তার ঘরে অনেক সোনাদানা আছে। তিনি জানতেন শিশু সন্তান ছাড়া ওই ঘরে আর কেউ থাকেন না। ভুক্তভোগীর স্বামী দুই বছর আগে মারা যান।

২ জুলাই রাতে সাদি কাকুলির বাসায় যান। প্রথমে বলেন, তার মা ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার ধার নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। এরপর ঘরে ঢুকে তার পা ধরে ১০ হাজার টাকা ধার চান। কিন্তু ভুক্তভোগী জানান, তার কাছে কোনো টাকা নেই। এরপরও অনেক জোরাজুরি করলে তিনি আলমারি খুলে বলেন, ‘দেখ, আলমারিতে শুধু ১০০ টাকা আছে। আর কোনো টাকা নাই’। এ সময় আলমারিতে কিছু স্বর্ণের জিনিসপত্র দেখতে পান সাদি। তখন স্বর্ণ লুটের লোভে তিনি কাকলিকে চেয়ারে বসিয়ে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেন। এরপর বিছানার পাশে রাখা ইস্ত্রি দিয়ে তার মাথায় জোরে আঘাত করেন। শেষে রান্নাঘর থেকে বটি এনে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর আলমারি খুলে স্বর্ণালঙ্কার (দুটি স্বর্ণের আংটি, দুটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া কানের দুল) নিয়ে নেন। চলে যাওয়ার সময় তিনি পাশের ঘরে খাটের ওপর ঘুমন্ত তালহাকেও গলাকেটে হত্যা করেন। তখন তালহা চিৎকার করে উঠে, যা অজিদ শুনতে পায়।

পিবিআই জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সাদির দেওয়া তথ্যমতে, তার শোবার ঘরের বিছানার তোশকের নিচ এবং স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপালের কাছ থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও আলামত হিসেবে হত্যায় ব্যবহৃত লোহার বটি, ইলেকট্রিক ইস্ত্রি, রক্তমাখা ওড়না জব্দ করা হয়।

আসামি সাদি গত ১০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT