খুলনায় আলোচনায় আ.লীগ প্রার্থী, ভোট টানতে কৌশলী জাপা
প্রকাশিত : ০৬:১০ পূর্বাহ্ণ, ৭ মে ২০২৩ রবিবার ১২১ বার পঠিত
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনায় চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। বিএনপি নির্বাচনি মাঠে না থাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক এখন আলোচনার শীর্ষে। তাকে ঘিরেই সব জল্পনা-কল্পনা চলছে। কারণ, তার বিপরীতে জাতীয় পার্টির যে প্রার্থী ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি ২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন মাত্র তিন হাজার।
এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে আরও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। ফলে জাতীয় পার্টি খুব একটা সুবিধা করবে এবার তা বলা যাচ্ছে না। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী বিগত নির্বাচনে পেয়েছিল ১৩ হাজার ভোট। এবারও দলটি নির্বাচন করছে। তবে মোট ভোটারের তুলনায় ১৩ হাজার ভোটও খুব একটা বেশি নয়। ফলে ইসলামী আন্দোলন এবার অন্য একটি কৌশল গ্রহণ করেছে। সিটির সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দিচ্ছে না। মাত্র ৪টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দিচ্ছে তারা। কাউন্সিলর পদে প্রার্থী কম দেওয়ার কারণ হচ্ছে তারা মেয়র পদে জয় পেতে এক জোট হয়ে কাজ করা। অপরদিকে জাতীয় পার্টি তাদের তিনজন প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রার্থীকে নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকি দুজন প্রার্থীর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এক ধরনের পরীক্ষা হিসাবেই নিয়েছে খুলনা সিটির নির্বাচন।
সংসদীয় আসন খুলনা ২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) এবং খুলনা ৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর) নিয়ে গঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন। এ দুটি আসনের মধ্যে খুলনা ২ আসন বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। অপরদিকে খুলনা ৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাব বেশি। খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোটের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়-এখানে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ রাজত্ব করেছে স্বাধীনতার পর থেকে। সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর এ পর্র্যন্ত ভোট হয়েছে ৫ বার। এরমধ্যে বিএনপির প্রার্থী জিতেছেন তিনবার এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুবার। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় সিটি করপোরেশনের চেয়ারে পুনরায় বসতে চলেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। তবে ভোটের মাঠে বিএনপির ভোটাররা কি করবেন, তারা কাকে ভোট দেবেন-এ নিয়ে নানা সমীকরণ চলছে প্রার্থীদের মধ্যে। এ সমীকরণ মেলাতে প্রার্থী ও দলীয় লোকজন যাচ্ছেন বিএনপির তৃণমূল নেতাদের কাছে। নিজেদের ভোটের পাল্লা ভারী করতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
ভোটারের দরজায় ইসলামী আন্দোলন : এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের পর ভোটার বেশি রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। গেল নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ১৩ হাজার ভোট পান মাওলানা মুজাম্মিল হক। এবার তারা আরও বেশি ভোট প্রত্যাশী। দলটির ওয়ার্ডের পাশাপাশি ইউনিট কমিটিও রয়েছে। সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত থাকায় নির্বাচনের মাঠে গুছিয়ে এগোচ্ছেন তারা। গেল রমজানে সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে ইফতার মাহফিল করেছে ধর্মভিত্তিক এ রাজনৈতিক দলটি। এসব ইফতার মাহফিলে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এলাকার মুরুব্বি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকেও দাওয়াত দেওয়া হয়। সেখানে দলীয় আদর্শ তুলে ধরে প্রচারণার পাশাপাশি সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। যাতে ভোটের সময় তারা কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩১টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছিল দলটি। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে এবার মাত্র ৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে তারা।
এবারে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী কম দেওয়ার কারণ হিসাবে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও নগর সহসভাপতি মাওলানা নাসির হোসেন বলেন-এবারের নির্বাচনটি একটু ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে পার করতে হচ্ছে। কারণ এবার বিএনপি নেই। ফলে আমরা মেয়র পদে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছি। তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদে প্রার্থী বেশি হলে নজর দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যে কারণে যেসব ওয়ার্ডে আমাদের বেশি ভোট রয়েছে সেসব ওয়ার্ডে আমরা প্রার্থী দিচ্ছি। অন্যদিকে মেয়র প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে বিজয়ী করার বিকল্প ভাবছি না। ইতোমধ্যে প্রত্যেক ওয়ার্ডে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। দল সিটি নির্বাচনকে সংসদ নির্বাচনের জন্য পরীক্ষা হিসাবে গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গুছিয়ে নামবে জাতীয় পার্টি : এদিকে ৩ মে দলের হাইকমান্ড খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধুকে কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করে। ২০১৩ সালে তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে ৩ হাজার ভোট পান। এবারের নির্বাচনে তিনি ছাড়াও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ-সদস্য আলহাজ আব্দুল গফফার বিশ্বাস মনোনয়নপত্র কেনেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির আরেক নেতা এসএম মুশফিকুর রহমানও মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে তিন প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির মূল দলীয় প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। বাকি দুজন শেষ পর্র্যন্ত থাকবেন কিনা সেটা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। তবে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দলের নীতিনির্ধারণী মহল। এসব কারণে এখনও ভোটের মাঠে গুছিয়ে প্রচারণায় নামতে পারেননি জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মধু। তবে এবারের নির্বাচনে বিএনপি না আসায় সেই ভোট ব্যাংকের দিকে নজর রয়েছে শফিকুল ইসলাম মধুর। খুলনায় স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিতি রয়েছে মধুর। এর আগে সিটি নির্বাচনের পাশাপাশি একাধিকবার দুটি আসন থেকে সংসদ-সদস্য পদেও নির্বাচন করেছেন তিনি। ফলে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন এবার।
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুর সঙ্গে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। খুলনার প্রত্যেক থানা এবং ওয়ার্ডে সক্রিয় কমিটি রয়েছে। তারা কাজ করছে। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হলে তখন একযোগে কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন-এখন আমরা ওয়ার্ড ও কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। একই সঙ্গে ভোটের মাঠে করণীয় কি সে বিষয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে নেতাকর্মীদের সঙ্গে। প্রতীক বরাদ্দের পর তিনি আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন বলে জানান।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।