বুধবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২রা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোটা ব্যবস্থা বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন ধ্বংস করছে

প্রকাশিত : ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ, ৪ জুলাই ২০২৪ বৃহস্পতিবার ৮০ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন ধ্বংস করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চাকরি লাভে বিশেষ বড় অঙ্কের কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠনকে ধ্বংস করে। আমি মনে করি যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি কখনই মঙ্গল বয়ে আনে না।

বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, একথা যেন আমরা ভুলে না যাই যে, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এ দেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, আন্দোলনে জয়লাভের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে এবং যে কোনো পর্যায় যেতে প্রস্তুত থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের মূল অর্জন সংবিধান, সেখানে সুযোগ-সুবিধাদির ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে।

জিএম কাদের বলেন, আমাদের শহিদ মিনার বৈষম্য থেকে মুক্তিসংগ্রামের, আত্মত্যাগের প্রতীক। আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ বৈষম্যহীন ন্যায়বিচারভিত্তিক নিজ দেশ গঠনে অঙ্গীকারের প্রতীক।

কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণি এবং চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। (৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য, এক শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত)। বাকি ৪৪ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দেওয়া হতো। ২০১৮ সালে মেধাবী ছাত্রদের দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রে সব কোটা পদ্ধতির নীতি বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে আগের মতো কোটা পদ্ধতি বহাল থাকে।

জিএম কাদের বলেন, ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। ৫ জুন রায় প্রকাশ করেন আদালত। সেখানে পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশটির বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে পুনরায় মাঠে নেমেছেন।

তিনি বলেন, সংবিধানে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, জন্মস্থানের কারণে কেউ প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগে অযোগ্য হবেন না। সরকারকে অথরিটি দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য, অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেজন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে। অনগ্রসর যারা, নৃগোষ্ঠীকে দিতে পারি, সংখ্যালঘুকে দিতে পারি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজš§ যারা থাকবেন তারা সবাই অনগ্রসর, এটা আমি মানতে রাজি নই। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সংবিধানকে যদি মানতে হয় তাহলে মানতে হবে, অনগ্রসর যারা নন, মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর বা এরকম পিছিয়ে পড়া অবস্থানে নেই। কাজেই তার বিষয়টি ওইভাবে দেখাটা সংবিধানসম্মত নয়।

জিএম কাদের বলেন, আমাদের প্রথম দরকার মেধা। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সামনের বিশ্ব আমাদের সেন্টিমেন্টের ওপর থাকবে না। আমাদের কমপিটিশন করতে হবে। সেখানে মেধাকে প্রাধান্য না দিলে প্রতিযোগিতা করব কিসের ভিত্তিতে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আগে যেটা সর্বজনীন পেনশন স্কিম দেওয়া হয়েছিল, যে কোনো কারণেই হোক সেটায় খুব একটা সাড়া আসেনি। এখন নতুন একটা স্কিম চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বেশিরভাগ সরকারের সমর্থক।

সরকারের কাছের লোক। তারা মানতে চাইছেন না। অনেকে মনে করছেন সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়ে কম। অনেকে এটাও মনে করছেন না। তারপরও মানছেন না।

তিনি বলেন, বললে খারাপ শোনাবে, সেটা হলো মানুষের আস্থাহীনতা আছে যে সরকার যেটা কমিট করছে আলটিমেটলি সেটা দিতে পারবে কিনা, দেবে কিনা, মানুষ পাবে কিনা। এটা বড় ধরনের একটা আস্থাহীনতা। এটা আমাদের সরকারের কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT