বৃহস্পতিবার ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কর ছাড়েও ফিরছে না পাচার করা টাকা

প্রকাশিত : ০৭:০৫ পূর্বাহ্ণ, ৩০ এপ্রিল ২০২৩ রবিবার ১৫৬ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরাতে চলতি বাজেটে কর ছাড় দিলেও সুফল মেলেনি। গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) একজনও সেই সুযোগ নেননি এবং একটি টাকাও দেশে ফেরেনি।

এ অবস্থায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ‘সাধারণ ক্ষমার’ এ বিধানটি অব্যাহত রাখা হবে কিনা তা পর্যালোচনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত মার্চে এনবিআর কর অঞ্চলগুলোকে চিঠি দিয়ে কোনো ব্যক্তি বিদেশ থেকে টাকা দেশে এনেছেন কিনা তা জানতে চায়। কোনো কর অঞ্চল থেকে এ চিঠির জবাব দেওয়া হয়নি।

এর প্রেক্ষিতে এনবিআর ধারণা করছে, এ সুযোগ কেউ গ্রহণ করেনি। এটি যেহেতু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, তাই আগামী বাজেটে এ ধারাটি অব্যাহত রাখা হবে কিনা সে বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে এনবিআর।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে চার হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা চার লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।

প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থ পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এছাড়া অর্থ পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।

অন্যদিকে সুইস ব্যাংকের তথ্য মতে, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্র্যাংক, স্থানীয় মুদ্রায় যা ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯৫ টাকা হিসাবে)।

এই টাকা অন্তত ২১টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান। আগের বছরের চেয়ে এই আমানত প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২০ সালে যা ছিল ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

চলতি বাজেটে অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে ‘১৯এফ’ নামে একটি ধারা যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত যে কেউ জরিমানা ছাড়া শুধু ৭ শতাংশ হারে আয়কর দিয়ে বিদেশ থেকে যে কোনো পরিমাণ নগদ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনতে পারবেন।

এক্ষেত্রে সম্পদের উৎস নিয়ে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না। করদাতার ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যাংক মোট অর্থের ৭ শতাংশ কর কর্তন করে চালান সরকারি কোষাগারে জমা দেবে এবং করদাতাকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেবে। সেই প্রত্যয়নপত্র করদাতাকে রিটার্নের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিদেশে পাচারকৃত টাকা জনগণের ‘হক’ উল্লেখ করে তা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে এ সুযোগে টাকা দেশে ফেরত আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মোটা দাগে, বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তি বছরে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় করলে তাকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো ব্যক্তির ৫০ লাখ টাকা বার্ষিক আয় থাকলে তাকে ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এ নিয়মে কর না দিলে তার অর্জিত অর্থ অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু ওই সমপরিমাণ অর্থ বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে এনে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয়কর দিয়ে সেটা বৈধ করা সম্ভব।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এত কষ্ট করে যারা বিদেশে টাকা (পাচার) নিয়ে গেছে, তারা ফেরত আনার জন্য তো নেয়নি। বাজেটে দেওয়া কর ছাড়ে টাকা ফেরত আসবে সেটা প্রত্যাশা করা বোকামি। টাকা ফেরত আসে তখনই যখন দেশে বড় ধরনের কোনো রূপান্তর হয়। তা ছাড়া পাচার করা টাকাই রেমিট্যান্স হিসাবে আনলে সরকারই আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে, আবার টাকাও বৈধ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে ৭ শতাংশ কর দিয়ে কেন মানুষ টাকা বৈধ করবে।’ তিনি আরও বলেন, আগামী বাজেটে এ সুযোগ রেখে কোনো লাভ নেই। অযথা বদনাম হবে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এ নীতি অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক, সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হয়েছে, বাজেট ঘোষণার পরপরই সব মহল থেকে সেটা বলা হয়েছে। গত ৯ মাসে এ সুযোগ কেউ নেয়নি, এটা সাধারণ ঘটনা। তার চাইতেও বড় উদ্বেগের কথা হলো, এ সুযোগ নিতে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে গেল কিনা সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।

গত কয়েক মাসে অপ্রাতিষ্ঠানিক মার্কেটে ডলারের দাম ও ব্যাংকে ডলারের দামের পার্থক্য দেখলে বিষয়টা কিছুটা আঁচ করা যেতে পারে। এত দাম দিয়ে ডলার কিনল কারা?

তিনি আরও বলেন, একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হচ্ছে। ওই একই পরিমাণ অর্থ বিদেশ থেকে ঘুরিয়ে আনলে ৭ শতাংশ কর দিতে হবে। এত বড় কর ব্যবধানের সুযোগ নিতে চাইতে পারে যে কোনো ব্যক্তি। তাই এ নীতি টাকা পাচারকে উৎসাহিত করছে কিনা সেটা আগামী বাজেটে ভেবে দেখা উচিত।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT