এখনো নিয়োগ হয়নি সেই ৫৩৬ পুলিশের
প্রকাশিত : ০৮:০২ পূর্বাহ্ণ, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার ১ বার পঠিত
দলীয় বিবেচনায় নিয়োগের অজুহাতে ২০০৭ সালে ৫৩৬ উপপরিদর্শক (এসআই) ও ২২১ জন সার্জেন্ট নিয়োগ বাতিল করে তৎকালীন সরকার। ১৭ বছর পর নিয়োগ বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার ও চাকরিতে যোগদানের আবেদন করেন ৩৩০ জন। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে পুলিশ সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় সুপারিশ করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছে। গত মে মাসে সুপারিশের ফাইলটি পাঠানো হলেও অজ্ঞাত কারণে তা আটকে আছে। নিয়োগবঞ্চিতরা ১৭ বছর পর আশার আলো দেখতে শুরু করলেও ফাইল আটকে ফের স্বপ্ন আটকে যাওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।
নিয়োগবঞ্চিতদের পক্ষে আবেদনকারীদের একজন পটুয়াখালীর আব্দুল মালেক। তিনি জানান, ২০০৬ সালে ক্যাডেট এসআইয়ে (নিরস্ত্র) ২৫০টি পদের বিপরীতে ৫৩৬ জনকে এবং পুলিশ সার্জেন্ট পদে ১১৮টি পদের বিপরীতে ২২১ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। তৎকালীন নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রার্থীদের লিখিত, মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর পুলিশ ভেরিফেকেশন চলমান থাকা অবস্থায় এসবি একটি রিপোর্ট দেয়। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ এই নিয়োগ বাতিলের নোটিশ অনুমোদন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেন।
চাকরি ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করা হলে সে সময় হাইকোর্ট একযোগে ১৯টি রিট ডিসচার্জ করে দেন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নানাভাবে চেষ্টা করে চাকরি ফেরত পাননি নিয়োগবঞ্চিতরা। উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছেন অনেকে।
আরেক নিয়োগবঞ্চিত জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা গত বছরের নভেম্বর মাসে নিয়োগ বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করি। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত মতামতের জন্য পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মতামত দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। মেডিকেল বোর্ডের সনদ নেওয়া এবং এসআই বা সার্জেন্ট পদে বয়স ও বিবাহের শর্ত শিথিলের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন বলে জানায়। এরপর জানুয়ারিতে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সচিবকে (পুলিশ ও এনটিএমসি) আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় জননিরাপত্তা বিভাগ।
নিয়োগবঞ্চিতরা জানান, ছয় সদস্যের কমিটি তিনটি সুপারিশ করে। ১. বিশেষ ব্যাচ বিবেচনা করে আবেদনের সমান সংখ্যক পদ অ্যাডহক ভিত্তিকে সৃজন করা এবং তাদের ট্রেনিং ও মেডিকেল বোর্ডে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তে মতামত দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো। ২. ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে আলাদা বিধিমালা তৈরি করে ব্যাচটির নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ। ৩. ১৯৯১ সালের নিয়োগ বাতিলকৃতদের ১৯৯৭ সালে যে প্রক্রিয়ায় পুনর্বহাল করা হয়েছিল, সেই প্রক্রিয়া ২০০৬ সালে বাতিলকৃতদের পুনর্বহাল করা যায় কি না, সে বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠানো।
কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় তাদের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে মতামত দেয়। সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয় এ-ও বলে দেয় যে, বিষয়টি উপদেষ্টা পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য। পরে এটি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সুপারিশ করে দেন।
নিয়োগবঞ্চিতরা বলেন, এরপর ফাইলটি পাঠানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে। পুলিশ সদর দপ্তরসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার প্রধান উপদেষ্টা ওকে করে দিলেই নিয়োগ বাতিলের আদেশটি প্রত্যাহার করে পুনর্নিয়োগের বাকি কার্যক্রম শুরু হবে।
একই কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, চাকরিতে যোগদান করতে ইচ্ছুক যে কজন আবেদন করেছেন, তাদের আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় পুনর্নিয়োগের পক্ষে মতামত দিয়েছে। এখন অপেক্ষা প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের। ঠিক কী কারণে আটকে আছে, তা আমাদের জানা নেই।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।