বৃহস্পতিবার ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ২১৬৫৮ কোটি টাকা

প্রকাশিত : ০৭:২৫ পূর্বাহ্ণ, ৯ জানুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার ১১৯ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ঋণ বিতরণ করা হয়, তার প্রায় ৩০ শতাংশ ঋণ ইতোমধ্যেই খেলাপি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই নাজুক। এসব প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা ঋণের ৪৩ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

তবে খাত সংশ্লিষ্ট এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা আসল চিত্র নয়। প্রকৃত খেলাপি আরও বেশি, যা এ খাতের জন্য অশনি সংকেত। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বা ২ শতাংশ বেড়েছে। এই খাতে সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ঋণ বিতরণ ছিল ৭২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। এর আগে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে খেলাপি ছিল ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের খেলাপি ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৫ শতাংশ।

যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি সেগুলো হলো- পিপলস লিজিং ৯৯.০২ শতাংশ, বিআইএফসি ৯৬.৮৫ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৯৪.৭৬ শতাংশ, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ৯৪.৪১ শতাংশ, জিএসপি ফাইন্যান্স ৯২.৩৭ শতাংশ, এফএএস ফাইন্যান্স ৮৯.৫৬ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিং ৬৬.৭৪ শতাংশ, সিভিসি ফাইন্যান্স ৫৯.৩৯ শতাংশ, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স ৫৯.১৭ শতাংশ, আইআইডিএফসি ৫৮.৬৪ শতাংশ, হজ ফাইন্যান্স ৫৭.৭৯ শতাংশ, ফনিক্স ফাইন্যান্স ৫৭.৭৭ শতাংশ, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স ৫৬.৮৬ শতাংশ, বে লিজিং ৫২.৮২ শতাংশ, উত্তরা ফাইন্যান্স ৫০.৮২ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ৪৩.১২ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করেছেন, পুরো খাতই এখন তার জের টানছে। পিকে হালদারের মালিকানা আছে বা ছিল, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যে কারণে সার্বিকভাবে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ঋণ পরিশোধের সময় পিছিয়ে দেওয়ায় ঋণগ্রহীতাদের অনেকেরই কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যায়। এখন ওই সব গ্রাহকের অনেকেই খেলাপি হয়ে পড়ছেন। এ কারণে খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া এমনিতেই মার্চ, জুন ও সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বাড়তির দিকে থাকে। বছর শেষে তা কিছুটা কমে। কারণ, বছর শেষে নানা ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি ছিল ৭২ হাজার ৮০৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে গত জুন শেষে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৬৫৬ কোটি টাকা। তারও তিন মাস আগে মার্চে মোট ঋণ ছিল ৭১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ওই ৩ মাসে ঋণ বেড়েছিল ৮৮৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা, যা গত জুনে বেড়ে হয় ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি ১৫ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। সেই হিসাবে ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা।

এসব বিষয়ে বিএলএফসিএর সাবেক চেয়ারম্যান ও আইপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মমিনুল ইসলাম বলেন, পুরো অর্থনীতিতে একটি চ্যালেঞ্জ তো আছেই। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনগুলোর জন্য যেসব নীতিমালা জারি করেছে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের চেয়ে কঠিন। এর ফলে তাৎক্ষণিক কিছু সমস্যা হলেও দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্ভব্য নীতিমালা মার্জ করার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা ভালো প্রতিষ্ঠান অনিয়মের দায় কাঁধে নিতে চাইবে না। এটাই স্বাভাবিক। বিদ্যমান কোনো আইনেও মার্জ করার বিধান নেই। তবে মনে হয় খারাপগুলোকে একটা অপরটার সঙ্গে একত্রিত করতে হতে পারে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT