শুক্রবার ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমার তো সব শেষ’

প্রকাশিত : ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ৩১ জুলাই ২০২৪ বুধবার ১০২ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

‘আমার তো সব শেষ! পড়াশোনাসহ সংসারের খরচ, নিত্যদিনের সব প্রয়োজন মেটাতো জুনায়েদ ফরাজি। তার উপার্জনের টাকায় আমাদের সংসার চলত। সংসারে আয়ের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়ে পুরো সংসারে অন্ধকার নেমে এসেছে। আমরা এখন কিভাবে চলব- সেটা আল্লাহ ভালো জানেন।’

অভাব-অনটনের সংসারে পড়াশোনা করতে পারেনি জুনায়েদ ফরাজি। জুনায়েদ ফরাজি কৃষক পরিবারের সন্তান ছিলেন। অভাব-অনটনের সংসারে পড়ালেখা করা হয়নি। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় শিশু বয়স থেকেই শ্রমিকের কাজ শুরু করতে হয়েছে তাকে। ছোট দুই ভাই ও এক বোন তার আয় করা টাকায় পড়াশোনা করছিল।
১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিলদেওয়ানিয়া গ্রামের শাহ আলম ফরাজির ছেলে জুনায়েদ। তিনি ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় একটি কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রির দোকানে শ্রমিকের কাজ করতেন।

জুনায়েদের পরিবার জানায়, শাহ আলম ফরাজি ও ডলি আক্তার দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের মধ্যে জুনায়েদ সবার বড়। শাহ আলম অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে স্ত্রী, সন্তান ও মায়ের ভরণ পোষণ করছিলেন। অভাবের সংসার হওয়ায় জুনায়েদকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে শিশু বয়স থেকে। এলাকার একটি বিদ্যালয়ে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর কাজের সন্ধানে গাজীপুরে চলে যান। সেখানে কয়েক বছর জুতা বিক্রির দোকান কাজ করেন। এরপর ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরে একটি কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রির দোকানে কাজ নেন।

জুনায়েদের এক বোন জাজিরার একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে, এক ভাই নবম শ্রেণিতে এবং আরেক ভাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। তাদের পড়াশোনার জন্য প্রতি মাসে সাড়ে আট হাজার টাকা করে পাঠাতেন জুনায়েদ।

দোকানের মালিক সবুজ আলম মোবাইলফোনে বলেন, ১৯ জুলাই বিকালে মিরপুরের অবস্থা খারাপ ছিল। পরিস্থিতি খারাপ থাকায় দোকান বন্ধ করে কর্মচারীরা বাসায় ফিরছিলেন। পথে জুনায়েদ গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার পরই তিনি মারা যান। ওই রাতে তিনি জুনায়েদের লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেন।

মঙ্গলবার বিলদেওয়ানিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়ির এক কোণে জুনায়েদকে কবর দেওয়া হয়েছে। কবরের পাশে মা ডলি আক্তার কান্না করছেন। বসতঘরে বসে দাদি রাবেয়া বেগম নাতির জন্য দোয়া পড়ছেন।

জুনায়েদের বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ভাইয়ার পাঠানো টাকা দিয়েই আমরা তিন ভাইবোন পড়াশোনা করতাম। ভাইয়া নেই, এখন আমাদের পড়াশোনার খরচ কে জোগান দেবে? কী অপরাধ ছিল আমার ভাইয়ার? এই বয়সে আমার ভাইয়াকে মরতে হলো কেন?

ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে ডলি আক্তার বলেন, আমার তো সব শেষ! পড়াশোনাসহ সংসারের খরচ, নিত্যদিনের সব প্রয়োজন মেটাত জুনায়েদ ফরাজি। আমরা গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। আমরা তো রাজনীতি বুঝি না। তাহলে আমার বুকের ধনকে কেন জীবন দিতে হলো?

জুনায়েদের বাবা শাহ আলম ফরাজি বলেন, আমরা এখন কী নিয়ে বাঁচব? ছেলে হত্যার বিচার কার কাছে চাইব?

নড়িয়ার রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবর বলেন, জুনায়েদ খুব অল্প বয়সেই পরিবারের হাল ধরেছিল। ১৯ জুলাই রাতে তার লাশ গ্রামে আনা হয়। কোনো ঝামেলা যাতে না হয়, তাই রাতেই তার দাফন হয়। তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT