বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাতি গর্তে পড়লে চীন কী করে

প্রকাশিত : ০৭:২৩ পূর্বাহ্ণ, ২২ মার্চ ২০২৩ বুধবার ১১২ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

হাতি গাড্ডায় পড়লেই সাহায্য করতে যেতে হয়; মুক্ত অবস্থায় নয়। মুক্ত হাতির ধারেকাছে যাওয়া বিপজ্জনক। চীনা প্রেসিডেন্ট মস্কোয় গেলেন কোন হাতিকে সাহায্য করতে? ইউক্রেনীয় গর্তে তো একা রাশিয়া পড়েনি; যুক্তরাষ্ট্রও পড়ে গেছে।

চীনের মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতি তুমুল সফল। চীন-সৌদি-ইরান মৈত্রীর সূচনা হয়েছে। ইরান তো তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক মিত্রই। এখন সৌদি আরবকেও আমেরিকার কোল থেকে সরিয়ে আনা গেল। এই জোরদার আত্মবিশ্বাস নিয়েই শি জিনপিং মস্কোমুখী হলেন। ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের দফা পাকা করে শান্তির রফা করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে। তবে এবারের বাজিটা মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে অনেক বড়। এবং চীন-রাশিয়া বন্ধুত্বের সীমানা যে প্রায় অসীম, সেটাও দেখা যাবে এবার। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলেই ফেলেছেন, ‘চীন দায়িত্বহীন।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান দেবে চীন? বেইজিংয়ের খেলা এটাই— রাশিয়াকে দাও অস্ত্র আর ইউক্রেনকে আটকাও কূটনৈতিক জালে। চীন কোনোভাবেই ইউক্রেনকে জিততে দিতে পারে না। চীন দেখাতে চায়, ইউক্রেনের মতো দেশকে পশ্চিমারা যদি বাঁচাতে না পারে, তাহলে
তাইওয়ানকে কীভাবে বাঁচাবে? এদিকে জেলেনেস্কি যতই লড়কে লেঙ্গে ভাব দেখান, ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ইউক্রেনের ন্যাটো প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর সবটাই (এক লাখ ২০ হাজার) প্রায় নিহত। যারা লড়ছে, তারা সদ্যপ্রশিক্ষিত এবং বিদেশি। রাশিয়া যখনই বুঝেছে, ঝোড়ো গতিতে কিয়েভ দখল করা সম্ভব নয়, তখনই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছে। যুদ্ধ যত লম্বা হবে, কেবল রাশিয়ারই সম্পদ খরচ হবে না, রিসোর্স ফুরাবে আমেরিকা ও তার মিত্রদেরও। এর মধ্যে পশ্চিমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রসদ আর অস্ত্র ইউক্রেনের তৃণভূমি আর নদীর পাড়ে খরচ হয়ে গেছে। তাদের পক্ষে বেশিদিন নিজেদের সামরিক সামর্থ্য কমিয়ে ইউক্রেনকে মদদ দেওয়া বুদ্ধির পরিচয় হবে না। ওদিকে রাশিয়াকে অর্থনৈতিক অবরোধ করতে গিয়ে পশ্চিমারা নিজেরাই জেরবার। আমেরিকার বড় বড় ব্যাংক দেউলিয়া হতে যাচ্ছে। আর পশ্চিমাদের ছেড়ে যাওয়া রুশ ব্যবসাগুলো নিয়ে নিচ্ছে চীন। চীন রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। যুদ্ধের বরাতে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম দামে কেনার সুযোগ হয়েছে। তাও আবার চীনা মুদ্রায়।

এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তাই চীন। এক যুদ্ধেই চীনের অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাচ্ছে। চীনের অর্থনীতি সবল হচ্ছে। রুশ ব্যবসা, আমদানি, এমনকি আন্তর্জাতিক ডিজিটাল লেনদেন থেকে শুরু করে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসায় নিয়ে নিয়েছে চীনা কোম্পানিরা। কভিড-১৯ নিয়ে বাড়াবাড়ি, উইঘুরে নির্যাতন, শি জিনপিংয়ের লাগাতার শাসন এবং দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের সম্প্রসারণবাদ থেকে নজর ঘুরে গেছে ইউক্রেনের দিকে। এই যুদ্ধে পরোক্ষ মদদ দিয়ে চীন এক ঢিলে মার্কিন শ্রেষ্ঠত্ব আর রুশদের দ্বিতীয় পরাশক্তি মর্যাদা ফুটো করে দিল। এখন অনেকের কাছে ভিলেন যখন পুতিন, তখন শি হাজির হয়েছেন শান্তির দূত হয়ে।

চীনের বিশ্ব পরিকল্পনায় যে কারণে স্বাধীন তাইওয়ান নেই, সে কারণে বিজয়ী ইউক্রেনও নেই। ইউক্রেন বিজয়ী হওয়া মানে মধ্য এশিয়া, বলকান, এশিয়া ও ইউরোপে আমেরিকার হাত সবল হওয়া। পুতিন হারলে তাই চীনও হারবে। ইউক্রেনের পরাজয় চীনের নতুন বিশ্বব্যবস্থার ভিত রচনা করে দেবে, আর যতি টানবে আমেরিকান শতাব্দীর। চীনা শতাব্দী শুরুর শর্ত জুগিয়ে দিল রাশিয়া। চীন একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠার দিকে।

চীনের এই সবল হাজিরানা যখন, তখন অনেক ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধান বেইজিং সফরের পরিকল্পনা কিংবা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চীনের এটি বিরাট কূটনৈতিক বিজয়। মধ্যপ্রাচ্যের পরে ইউক্রেন কূটনীতি চীনকে কূটনৈতিক বিশ্বে অপরিহার্য শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

এর অন্য সুফল হলো, অগ্নিবলয় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে, যুদ্ধ হবে না দক্ষিণ এশিয়ায়। চীন এখন সেদিকেই তাকিয়ে, যেদিকে তাকিয়ে আছে সারাবিশ্ব: বলকান ও ককেশীয় অঞ্চল। যুদ্ধ যদিও হয়, সেটা হবে আমেরিকাকে আরও আরও ফ্রন্টে জড়িয়ে ফেলে কমজোরি করার যুদ্ধ।

চীনা প্রস্তাব হয়তো ইউক্রেন মানতে চাইবে না। এর অন্যতম একটা কারণ, কোনো শান্তি পরিকল্পনায় ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চীন দেবে না। না মানলেও চীনের এই শান্তির দূত হয়ে ওঠার ভূমিকা অস্বীকারও করা যাবে না। অন্যদিকে, আগে-পরে ইউক্রেন পুনর্গঠনের প্রশ্ন আসবে। চীন সেই প্রস্তাব দিয়েই রেখেছে। এটাই হয়তো শি জিনপিং চেয়েছেন। কিন্তু ইউক্রেনকে একটা পর্যায়ে এসে মানানোর দরকার হতে পারে স্বয়ং পশ্চিমের। তারা বুঝতে পারছে ইউক্রেন তাদের বৈশ্বিক দাপট, তাদের অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব, প্রাযুক্তিক ক্যারিশমা— সবকিছু টেনে নিচে নামাচ্ছে।

শি জিনপিংয়ের এই মস্কো সফর পুতিনকেও ক্রেমলিনের ভেতর শক্তি জোগাবে। পুতিন দেখাতে পারেবন, বিশ্বে তিনি একা তো ননই, বরং বিশ্বের উদীয়মান সেরা পরাশক্তি তাঁর সঙ্গে আছে। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত এই বন্ধুত্ব ক্রেমলিনের পুতিন সমালোচকদের বিরুদ্ধে, কোনো সম্ভাব্য জেনারেলদের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে একটা রক্ষাকবচ হয়ে গেল। কিন্তু পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার দাম দিতে হবে ইউরোপে। ইউরোপের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক, প্রাযুক্তিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কে মন্দা আনতে পারে। এ জন্যই বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, চীনের লক্ষ্যগুলো হয়তো অর্জনযোগ্য; কিন্তু তারা আবার পরস্পর সাংঘর্ষিক। একটিতে সফল হলে অন্যটিতে তার কুপ্রভাব পড়তে পারে।

যদি কোনোভাবে চীনের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়, তার অর্থ নতুন যুদ্ধের সম্ভাবনা ফুরিয়ে যাওয়া নয়; বরং রাশিয়াকে আরও বড় যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য সময় করে দেওয়া।

এখন দেখা যাক, শি জিনপিং কতটা জীবনানন্দ দাশের কবিতার সুবিনয় মুস্তফীর ভূমিকা নিতে পারেন। সুবিনয় মুস্তফী নাকি বিড়াল আর তার মুখে ধরা ইঁদুরকে একসঙ্গে হাসাতে পারতেন।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।     বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন।  নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।  নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন।  তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।  বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।   এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে।  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন। তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT