সবাইকে ঘর করে দেব ॥ ভূমিহীন গৃহহীনদের আশ্বাস
প্রকাশিত : ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ, ২২ জুলাই ২০২২ শুক্রবার ৬৩ বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল-মত নির্বিশেষে সকলের ঠিকানা তার সরকার নিশ্চিত করবে উল্লেখ করে আবেগজড়িতকণ্ঠে বলেছেন, এটা একটা মহৎ কাজ, মহৎ উদ্যোগ। কারণ, একটা ঘর একটা মানুষের জীবনটা তো পাল্টে দেয়। ঘর পাওয়া মানুষের যে হাসিটা- এটাই তো সব থেকে বড় পাওয়া জীবনের। এর থেকে বড় কিছু আর হতে পারে না। আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি যেন, এই দেশের মানুষকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে বাঁচার মতো একটা সুন্দর সমাজ দিতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারও কাছে যদি খবর থাকে বাংলাদেশের একটি মানুষ ভূমিহীন বা গৃহহীন রয়েছে, অবশ্যই আমাদের খবর দেবেন। দল-মত নির্বিশেষে যেই গৃহহীন থাকবে, আমরা তাদেরকেই ঘর করে দেব। ঠিকানা এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব। দল-মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, তাতে কিছু আসে যায় না। দেশটা তো আমাদের। আর আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তার মানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আমার। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করাই তার দায়িত্ব।
দৃঢ়কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, আমরা এগিয়ে যাব। এখনও দেশকে ভালভাবে চালাতে পারছি। কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় ধাপের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি জমিসহ নির্মিত ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দল-মত বা আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ এবং মানুষকে আমি মানুষ হিসেবেই দেখি এবং প্রত্যেকটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে- সেটাই আমি চাই। আমার বাবার সেটাই শিক্ষা। যে কারণে এ দেশের প্রত্যেকটি মানুষের আমি সুন্দর জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এই ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের কাছে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করেন। পাশাপাশি পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সবগুলো উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন উপজেলা হিসেবেও ঘোষণা দেন। ‘দেশে একজন মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এর মাধ্যমে দেশের ৪৯২টি উপজেলার এক লাখ ৩১ হাজার ৬৪৫ জন মানুষ নিজস্ব ঠিকানা অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরকারীভাবে নির্মিত দুই কাঠা জমিসহ নির্মিত বাড়ি উপহার পেল।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সবকটি উপজেলাসহ দেশের ৫২টি উপজেলা সম্পূর্ণ ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হওয়ার সাফল্য তুলে ধরে বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার প্রত্যেক উপজেলাকেই এভাবে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত করতে পারব। প্রত্যেকের একটি ঘর থাকবে, একটি স্থায়ী ঠিকানা থাকবে, একটি সুন্দর বাসস্থান থাকবে এবং তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। আর ইনশাআল্লাহ সেটা আমরা করে ফেলতে পারব বলেই বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে আমরা ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠিকানা দিতে পারছি বলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। এই কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনসহ সকল রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ গ্রামে বা এলাকায় কোন ভূমিহীন বা গৃহহীন রয়েছে কিনা- তা খুঁজে দেখার আহ্বান জানান, সরকার তাদের ঘর নির্মাণ করে দেবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পাঁচটি জেলার পাঁচটি স্থানের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। যুগের পর যুগ ঠিকানাবিহীন থাকা উপকারভোগীরা নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে ছিলেন আত্মহারা। তারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আনন্দের কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। উপকারভোগীদের এমন প্রতিক্রিয়া শুনে প্রধানমন্ত্রী নিজেও তার আবেগ ধরে রাখতে পারেননি।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলাধীন চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলাধীন গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলাধীন চর ভেড়ামারা আশ্রয়ণ প্রকল্প, পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর উপজেলাধীন মহানপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলাধীন জাঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থানে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান প্রকল্পের ওপর একটি উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন এবং এর পরেই একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অসহায় মানুষগুলোর জন্য ঘর নির্মাণে সম্পৃক্ত থাকায় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং ছিন্নমূল মানুষগুলোরও ঠিকানা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা একটা মহৎ কাজ, মহৎ উদ্যোগ। কারণ একটা ঘর পাওয়ার পর একটা মানুষের জীবনটা তো পাল্টে যায়। মানুষের মুখে যে হাসিটা- এটাই তো সব থেকে বড় পাওয়া জীবনের। এর থেকে বড় কিছু আর হতে পারে না। আমরা চাচ্ছি, আমাদের বাংলাদেশে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীন পুনর্বাসন হবে। প্রত্যেকটা মানুষ তার ঠিকানা পাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা বাস্তবায়ন করাই তার লক্ষ্য, আর এ জন্য জীবনে বারবার মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে পড়লেও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমতে তিনি প্রাণে রক্ষা পান বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বোধহয় সে জন্যই (জাতির পিতার উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা) আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। না হলে বারবার মৃত্যুকে আমি সামনে দেখেছি। কিন্তু আমি কখনও ঘাবড়ে যাইনি বা ভয়ও পাইনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি যেন, এই দেশের মানুষকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে বাঁচার মতো একটা সুন্দর সমাজ দিতে পারি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা, স্কুলগুলোকে জাতীয়করণের পাশাপাশি প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে গণমানুষের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি। একই সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার দ্বার অবারিতকরণের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করাতেও তার সরকারের পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্যই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ঋণ দেয়া হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই সুযোগ নিয়ে নিজেদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবনটাকে আরও উন্নত করবেন এবং নিজেরাও ভূমি কিনে ঘরবাড়ি করার যোগ্যতা যেন অর্জন করতে পারেন- সেটাও আমরা চাই। কারও কাছে হাত পেতে নয়, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মর্যাদার সঙ্গে যেন বেঁচে থাকতে পারেন, সেটাই আমি চাই। এই সমাজটাকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পেতে পারেন- সেটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নে নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত ২১০টি পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রতিটি পরিবারকে ২ দশমিক ৫ একর করে ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম সর্বপ্রথম শুরু করেন। এখন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এ ইউনিয়নে কলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫ দশমিক ১৫ একর অবৈধ দখল উদ্ধারকৃত জমিতে নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে, ভিক্ষুক, বিধবা ও অসহায় এক হাজার ৪২৫ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাগেরহাটে সুন্দরবনের দস্যুতা ছেড়ে দেয়া ১৩ জন জলদস্যু পরিবারকে এবং পঞ্চগড়ে ৩৬টি ছিটমহলের ৩৪৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা ঘর পেয়েছেন, তাদের জন্য উন্নত স্যানিটারি ল্যাট্রিন, বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। যারা নতুন ঘর পেয়েছেন, তাদের বিদ্যুত ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি মিতব্যয়ী হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যে ঘরবাড়ি যা দিয়েছি, সেগুলো রক্ষা করা, উন্নত করা- এটা আপনাদেরই দায়িত্ব। এবারে আমরা এই তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার যে ঠিকানা দিতে পারছি, আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আর বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী করোনার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে আমেরিকার ও ইউরোপীয় দেশগুলোর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট বিরূপ প্রভাবের কথা উল্লেখ করে সবাইকে মিতব্যয়ী ও সাশ্রয়ী হওয়ার মাধ্যমে সঙ্কট উত্তরণে দেশবাসীর সহযোগিতার প্রত্যাশাও পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় সকলকে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পুনরায় আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এক দিকে করোনা আর একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমেরিকা রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দিয়েছে, তার ফলে আমাদের সার কিনতে সমস্যা হচ্ছে, খাদ্য কিনতে সমস্যা হচ্ছে এবং এ সমস্ত কারণেই আজকে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ^ব্যাপীই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এবং উন্নত দেশগুলোতে পর্যন্ত খাদ্যের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। আজকে আমেরিকা বলেন, ইংল্যান্ড বলেন, সব জায়গাতেই বিদ্যুত সাশ্রয় করা, পেট্রোল ও ডিজেলসহ জ¦ালানি সাশ্রয় করার উদ্যোগ উন্নত দেশগুলোও নিয়েছে। স্পেন, পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও দেখা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখনও আমাদের দেশটা ভালভাবে চালাতে পারছি, কিন্তু আমাদের এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে এবং সকল প্রকার সতর্কতামূলক পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। তাই সবাইকে বলব, বিদ্যুত সাশ্রয় করতে হবে, পানি এবং জ¦ালানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে, আপদকালীন সঞ্চয় সবাইকে বাড়াতে হবে। আর কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে, সেখানে খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। ইনশাল্লাহ তবেই আমরা যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করতে সমর্থ হব।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন জমি কেউ ফেলে রাখবেন না, একটা তরকারি গাছ বা মরিচ গাছ হলেও লাগান, কোন জলাধার কেউ ফেলে রাখবেন না। হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু প্রতিপালন থেকে শুরু করে সকলকেই যার যেভাবে সম্ভব, তিনি তাকে সেভাবে উৎপাদনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান, যেন আমরা নিজেরাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি এবং খাদ্যের জন্য কারও মুখাপেক্ষী হতে না হয়।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ এবং এই দুর্যোগের সঙ্গেই আমাদের বসবাস উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বর্ষাকাল চলমান থাকায় আবারও যে কোন সময় বন্যা আসতে পারে, সে জন্যও সতর্ক থাকতে হবে। এর আগে বৃহত্তর সিলেট বিভাগে বন্যা মোকাবেলায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন, কাজেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই আমাদের কাজ।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে দেশব্যাপী মোট ৬৭ হাজার ৮০০টি ঘর দেয়া হচ্ছে। এই ৬৭ হাজার ৮০০ ঘরের মধ্যে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে এবং বাকি ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ পর্যন্ত এক লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এখন নিজ ঘরে পড়ে ডাক্তার হব ॥ নিজস্ব পাকা বাড়ি পেয়ে আত্মহারা পঞ্চগড় মহানপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী পরিবারের এক ছোট শিশুকন্যা জান্নাত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের নিজের কোন ঘর ছিল না, এখন আপনি ঘর দিয়েছেন। নিজস্ব ঠিকানায় চিঠি পাব। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে অনেক ভালবাসি। এখানে আসুন, নিজ চোখে আপনাকে দেখতে চাই। ঘর পেয়ে অনেক খুশি। নিজ ঘরে পড়াশোনা করব। বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।’ আবেগাক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেন, ‘অবশ্যই তুমি বড় হয়ে ডাক্তার হবে, তোমার প্রতি আমার দোয়া রইল।’
এখানে ঘর পাওয়া রিক্সাচালক রবিউল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ঢাকায় রিক্সা চালাতাম। বড় বড় দালান দেখে মনে মনে ভাবতাম, আমার কি একটা টিনের ঘরও হবে না? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি সে ব্যবস্থা করেছেন। এক মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, আরেক মা আপনি ঘর দিলেন। আনন্দে আত্মহারা রবিউল এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে মাটিতে শুয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি এখন পঞ্চগড়ে গিয়ে রিক্সা চালানোর পাশাপাশি অন্য কাজও করতে পারবেন। আমরা সেখানে স্বল্প সুদে ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি।
বাগেরহাটের এক সময় জলদস্যুতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া আবদুল হান্নান নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমাদের পরিবার ৯ সদস্যের। পিতার পক্ষে সংসার চালানো বড়ই কঠিন ছিল। সংসারের কথা বিবেচনা করে জলদস্যুতার জীবন বেছে নেই। খেয়ে না খেয়ে সুন্দরবনে দুঃসহ জীবন কাটিয়েছি। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে সুন্দর জীবন দিয়েছেন। আপনার দেয়া সাধারণ ক্ষমায় আমি সুন্দর জীবন পেয়েছি। এখন ঘর দিলেন। কখনও ভাবিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব, গ্রামে আসত পারব, নিজের বাড়িতে থাকতে পারব। সেই সুযোগ হয়েছে। এখন আমি দিনমজুরের কাজ করি। আগামীতে ব্যবসা করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী প্রথমে মতবিনিময় করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে রামগতি থেকে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছিলেন, সেই রামগতির চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের চরকোলাকোপা আশ্রয়কেন্দ্রে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জাতির পিতার স্মৃতিচারণ করে বলেন, জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আমরা স্বাধীন দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন ছিলাম। জাতির পিতা ’৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চর পোড়াগাচা গ্রাম পরিদর্শন করেন। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য তিনি নিজ হাতে মাটি কেটে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জায়গা করে দেন। সেখানে জাতির পিতাকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। জাতির পিতার দয়ায় আমরা আড়াই একর জায়গা পাই। সেখানেই খুব সুখে-শান্তিতে বসবাস করছি। আমরা অনেক অনেক সুখে আছি।’
ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ৫২ উপজেলা ॥ ঢাকার নবাবগঞ্জ, মাদারীপুরের মাদারীপুর সদর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মানিকগঞ্জের ঘিওর, সাটুরিয়া, রাজবাড়ীর কালুখালী, ফরিদপুরের নগরকান্দা, নেত্রকোনার মদন, ময়মনসিংহের ভালুকা, নান্দাইল, ফুলপুর, ফুলবাড়িয়া, জামালপুরে বকশীগঞ্জ, চট্টগ্রামের পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, রামগঞ্জ, ফেনীর ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, তেঁতুলিয়া ও বোদা।
এ ছাড়া দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, নীলফামারীর ডিমলা, নওগাঁর রাণীনগর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, রাজশাহীর মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা, বগুড়ার নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া নাটোরের বাগাতিপাড়া, পাবনার ঈশ্বরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু, সাতক্ষীরার তালা, মাগুরার মাগুরা সদর, শ্রীপুর, মোহম্মদপুর, শালিখা, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, পটুয়াখালীর দশমিনা।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।