সংগীত ঐক্যের দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক: ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী
প্রকাশিত : ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ, ১৭ জুলাই ২০২২ রবিবার ৮০ বার পঠিত
সংগীত সংশ্লিষ্টদের ঐক্যবদ্ধ করে দেশীয় সংস্কৃতিকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্য নিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শেষ হলো সংগীতের প্রথম জাতীয় উৎসব ও সম্মেলন। উৎসবটি আয়োজন করেছে সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ।
শনিবার রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মূল মঞ্চে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এই উৎসব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ-এর মহাসচিব শহীদ মাহমুদ জঙ্গী।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় সংগীত বাজানোর মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়। এর পর সংগীত পরিবারে প্রয়াতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগীত ঐক্যের দুই মহাসচিব কুমার বিশ্বজিৎ ও নকীব খান। এর পর বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কে এম খালিদ এমপি এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি।
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলি লাকী। উৎসব সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর বক্তব্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজনের প্রথম পর্ব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, ‘আমাকে যখন বলা হলো এই আয়োজনের কথা, তখন আমার কাছে মনে হলো এটা বিরল সুযোগ। এটা হাতছাড়া করতে চাইনি। কারণ সংগীতের তিনটি সংগঠন মিলে যে আয়োজন বা ঐক্য করেছে সারা দেশের শিল্পীদের নিয়ে, এটা প্রশংসনীয়।’
তিনি বলেন, ‘শিল্পীরা আমৃত্যু গেয়েই গেছেন, কী পেলেন সেই হিসাব মেলাননি। এবার ভাবার সময় এসেছে শিল্পীদের যোগ্য সম্মান ও সম্মানী ফিরিয়ে দেওয়ার। সকল জটিলতা সমাধানের এখনই সময়। সংগীত ঐক্য প্রণীত ১৮ দফা প্রস্তাবনা আমি দেখেছি। এতে একটি লক্ষ্য রয়েছে। সেটার মধ্য দিয়েই কার্যকর ফল আসতে পারে। এটাই ঐক্যের অনন্য বৈশিষ্ট্য। বাংলার মাঝি থেকে কৃষক, মা থেকে শিক্ষক- সবাই গান ভালোবাসেন। এখন ভিডিও দেখি সিনেমার মতো লাগে। সময়ের সঙ্গে এগুলোকে আমরা আলিঙ্গন করছি। তাই এই সুযোগগুলো আমাদের কাজে লাগাতে হবে। ঐক্যের দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক। যার অনেকখানি পূরণ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিশেষ করে কপিরাইট আইন সংশোধন, রয়্যালটির ন্যায্যতা ও সম্মানী বৃদ্ধি হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এগুলোর উদ্যোগ নিলে আমরা সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য শতভাগ আন্তরিক থাকব।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দারুণ এক সুখবর দেন শিল্পীদের। তিনি জানান, খুবই অল্প সময়ের মধ্যে চালু হচ্ছে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট। যেটি সূচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিল্পীরা হৃদয়ের তাগিদে গান করেন। আমরা তাদের কিচ্ছু দিতে পারিনি। অথচ এই সংগীত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার ছিল। যুদ্ধে কী পরিমাণ প্রেরণা যুগিয়েছে গান, ভাবা যায় না। কাজেই সংগীতের যে দাবিগুলো উত্থাপিত হয়েছে এই ঐক্যের মাধ্যমে, সেগুলো সব যৌক্তিক। এগুলো বাস্তবায়নের পথে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’
উৎসব সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী বলেন, ‘১৯১৫ সালে গ্রামোফোন থেকে প্রথম রয়্যালটি নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর আমরা এই ২০২২ সালে এসেও সেই রয়্যালটি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে নিয়ে কথা বলছি। ধরে নিলাম এই আলাপের মধ্য দিয়ে আমরা আইন পাবো, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করবে কে? সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে সমানভাবে। দেশে খেলার মাঠ নেই, সংস্কৃতির চর্চা ক্রমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসবের দিকেও আমাদের সবার নজর দিতে হবে। তবেই আমাদের সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটবে সমানতালে। আমরা চাই না, আমাদের নতুন প্রজন্ম গান-বাজনা থেকে সরে যাক, শিল্পীদের সন্তানরা বিদেশে পাড়ি জমাক।’
সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ মনে করে, ৫০ বছর ধরে গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীরা নানা অনিয়ম, অবহেলা আর প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এ পরিস্থিতি উত্তরণের লক্ষ্যে গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীরা এক ছাতার নিচে আসেন। গঠিত হয় ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’।
সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ-এর প্রথম ও বর্তমান কমিটিতে রয়েছেন, সভাপতি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মহাসচিব (৩ জন) শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, নকীব খান ও কুমার বিশ্বজিৎ, অর্থ ও দফতর সচিব আসিফ ইকবাল, তথ্যপ্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সচিব হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, সাংস্কৃতিক সচিব বাপ্পা মজুমদার, প্রচার ও প্রকাশনা সচিব জুলফিকার রাসেল এবং নির্বাহী সদস্য মানাম আহমেদ, কবির বকুল, শওকত আলী ইমন ও জয় শাহরিয়ার।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।