বুধবার ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকরা কি বনসাই হয়ে থাকবেন?

প্রকাশিত : ০৬:২৮ পূর্বাহ্ণ, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ মঙ্গলবার ৬২ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

উন্নত দেশগুলোয় অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো তাদের শিশুদের বিদ্যালয়ের দরজায় পৌঁছে দিয়ে আসা এবং দিন শেষে বিদ্যালয়ের দরজা থেকে বাসায় নিয়ে আসা। অন্য সব দায়িত্ব তারা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর দিয়ে রাখেন। সেসব দেশের অভিভাবকরা জানেন, শিক্ষকই শিশুদের পরিপূর্ণ দক্ষতা ও সততার সঙ্গে শিক্ষা, শিল্পকলা ও খেলাধুলায় দক্ষ করে তোলেন। অন্যদিকে আমরা আমাদের শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার সাহস পাই না। কারণ আমরা জানি, আমাদের শিক্ষকরা সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। আসলে আমরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঠিক লোকদের শিক্ষক বানাইনি কিংবা তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরাই তাদের চাপতে চাপতে সমাজে বনসাই বানিয়ে রেখেছি।
এতে আমরা সমাজে বিদ্যালয়ের সমান্তরাল অনেক প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠতে সাহায্য করছি। অর্থের বিনিময়ে কোনোটি থেকে আমাদের শিশুরা গণিত শেখে, কোনোটি থেকে বিজ্ঞান, কোনোটি থেকে ভাষা, কোনোটি থেকে পড়া, কোনোটি থেকে শুধু লেখা ইত্যাদি। অথচ বিদ্যালয় থেকেই এসব শেখার কথা। সামষ্টিকভাবে যে পরিমাণ অর্থ আমরা এসব জায়গায় ব্যয় করছি, তা যদি শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এবং বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করতাম তাহলে এত সমান্তরাল প্রতিষ্ঠানে দৌড়াতে হতো না। আমাদের শিশুরাও আদর্শ শিক্ষক ও বিদ্যালয় পেত এবং আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠত আনন্দের সঙ্গে।

এ দেশে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রদের টেবিল-চেয়ারের উন্নয়ন হয়; ছাত্রদের জন্য খেলাধুলার আধুনিক সরঞ্জাম আসে; বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস আসে; বিভিন্ন কার্যক্রম যুক্ত হয়; মাঠের উন্নয়ন হয়। এমনকি মাঠের চারপাশের দেয়ালের উন্নয়নও বিবেচনায় নেওয়া হয় গুরুত্বের সঙ্গে। কিন্তু শিক্ষকদের উন্নয়নের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। তাদের বসার টেবিল-চেয়ার উন্নত হয় না; তাদের বেতন-ভাতা এবং মর্যাদা বাড়ে না অন্য পেশায় নিয়োজিতদের যেভাবে বাড়ে; অন্য দেশের শিক্ষকদের যেভাবে বাড়ে সেভাবে তো নয়ই। শিক্ষকদের উন্নয়নের বিষয়টি সামনে এলেই যেসব প্রশ্ন ওঠে– শিক্ষকদের বেতন/সুযোগ-সুবিধা/ইজ্জত বাড়ালে সেটা অমুক শ্রেণির কর্মকর্তাদের তুলনায় কি বেশি হয়ে যাবে না? শিক্ষকের বেতন বেশি হয়ে গেলে অন্যরা সমাজের চোখে ছোট হয়ে যাবে না? এ দেশে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়াতে গেলে তা অন্য কারও চেয়ে বেশি হয়ে গেল কিনা– খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় আমাদের শিক্ষকরা অন্যদের তুলনায় যোজন যোজন পিছিয়ে– সেটা বেমালুম ভুলে যাওয়া হয়। যেসব দেশ শিক্ষায় উন্নতি করেছে, তারা শিক্ষকের বেতন-ভাতার সঙ্গে অন্যদের তুলনা এনে গুরুত্বের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেনি। এ খাতকে তারা আলাদাই রেখেছে।

প্রশ্ন আসে, দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্বপ্নবাজ, সৃজনশীল, মেধাবী ও সৎ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের সত্যিকারের জনসম্পদে রূপান্তর করাই কি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়? তাহলে শিক্ষকদেরই কেন বিভিন্ন গ্রেডভিত্তিক সম্মান/গুরুত্বের তালিকায় একেবারে নিচে রেখে অপমান করতে হবে? শিক্ষকদের কি গ্রেড ব্যবস্থা থেকে বের করে এনে তাদের কাজের উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায় না?

মুহাম্মদ ইয়াসীন ইবনে মাসুদ: শিক্ষক
easin.edu@gmail.com

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT