রিজার্ভ-মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি
প্রকাশিত : ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ, ২১ জুলাই ২০২২ বৃহস্পতিবার ৯৩ বার পঠিত
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে দেশে এখনও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এক যুগ আগের চেয়ে এ দুই ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এখন অনেক ভাল। সম্প্রতি আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে বলে যে উদ্বেগ আছে তাকেও অমূলক মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে এখনই ঋণ নেয়ার প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সংস্থাটির কাছ থেকে সহজ শর্তের ঋণ নেয়া হবে। তবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অর্থ নেয়া হবে না।
এখন আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছেন। বিভিন্ন বিষয়ে তারা পরামর্শ দিচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ৫১৭ কোটি ১৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৬ টাকা ব্যয়ে ছয় ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের জন্য রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার ও সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৭৭ কোটি ১০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ পরিস্থিতি এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল তার চেয়েও ভাল অবস্থানে আছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, রিজার্ভ কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এর আগে গত বছরে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড রিজার্ভ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে। চলমান বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতিকে ভিন্নভাবে দাঁড় করার চেষ্টা করা হয়। মূল্যস্ফীতি মাসের ভিত্তিতে (মানথ টু মানথ) হিসাব করি। মূল্যস্ফীতি হবে এক বছরের গড় মূল্যস্ফীতি। এখন গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন এক মাসের ৭ দশমিক ৫৬ কে নিয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে গেছি। অথচ ২০০৯ সালে যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ।
সেখান থেকে শুরু করে এখন যে গড় মূল্যস্ফীতি সেটা মাসের ভিত্তিতে ধরলে এক রকম তথ্য পাবেন। আর গড় মূল্যস্ফীতি পেলে আরেক রকম তথ্য পাওয়া যাবে। এখন আমাদের গড় মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। সম্প্রতি আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে বলে যে উদ্বেগ আছে তাকেও অমূলক মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন আরম্ভ করি আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। এখন নাই নাই করেও আমাদের ৪০ বিলিয়ন ডলার আছে। ৪০ বিলিয়ন কিন্তু আগে কখনও আমাদের ছিল না। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি। আমাদের সরকারের তিন মাসের মাথায় ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়নে আসল। ১০ থেকে আমরা ৪৮ বিলিয়নে গেলাম। সেখান থেকে এখন ৪০ বিলিয়নে আছি।’
আইএমএফের ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্থাটির কাছ থেকে কোন ঋণ এখন নেয়া হচ্ছে না। তবে যদি প্রয়োজন হয় আমরা (ঋণ) নেব। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন নেই। তিনি জানান, ঋণের বিষয়ে আইএমএফ কিংবা সরকার কোন পক্ষই কোন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়নি। অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের একটা কনসালটেটিভ কমিটি বাংলাদেশে আছে। তারা সরকারকে পরামর্শ দেন, সরকারও তাদের পরামর্শ দেয়। তারা যে আসছে, আমাদের কাছে তারা আনুষ্ঠানিক কোন প্রস্তাবনা দেয়নি। আমরাও তাদের কোন ফরমাল প্রস্তাবনা দেইনি। তবে তাদের পরামর্শগুলো সরকারের জন্য উপকারী হয়। তারা সংস্কারপন্থী কিছু প্রস্তাব দেয়। তাদের পরামর্শগুলো দেশের জন্য ভাল হয়।
আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিলেও দেশের স্বার্থ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সেই প্রস্তাবনা আসলে সবাই ভালভাবেই জানবেন। এমন কোন প্রকল্প বা ফান্ডিংয়ে যাব না, যেটা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী হয়। নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অর্থ নেব না। বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আইএমএফ যে পরিমাণ সহযোগিতা করেছে, তারা কি সেই পরিমাণ পায়নি? তারা বলতে পারবে না যে আমরা একদিন পরে পেমেন্ট করেছি। ঋণ দিলে তারাও নিশ্চিত থাকবে, আমরাও তাদের বার বার আশ্বস্ত করেছি যে, আমাদের ঋণ দিয়ে তা কখনও আমাদের মাফ করতে হবে না। তিনি বলেন, আমরা বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে খোঁজখবর রাখছি। আমাদের অর্থনীতি যতটা খারাপ অবস্থা বলে বলা হচ্ছে আসলে তা নয়। অনেক দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনীতি এখনও অনেক ভাল অবস্থানে।
৫১৭ কোটি ১৯ লাখ ব্যয়ে ছয় ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন ॥ চলতি অর্থবছরের জন্য রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার ও সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৭৭ কোটি ১০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১০টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে।
ক্রয় প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৪টি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ২টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১টি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাবনা ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৫১৭ কোটি ১৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৬ টাকা। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সাবিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবের এসএবিআইসি এ্যাগ্রি-নিউট্রিনেটস কোম্পানি থেকে ২য় লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১৬৭ কোটি ৫৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য সিঙ্গাপুরের এম/এস এ্যাগ্রোক্রোপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন গম ২০৯ কোটি ৫০ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।