মাগফিরাতের দশ দিন গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার প্রশিক্ষণ নিতে হবে
প্রকাশিত : ০৭:০১ পূর্বাহ্ণ, ২১ এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার ৩৩ বার পঠিত
সিয়াম বা রোজা হচ্ছে তাকওয়া ও হৃদয়ের পবিত্রতা, শালীনতা, উন্নত নৈতিকতা, আত্মার সজীবতা ও চিন্তার বিশুদ্ধতা অর্জনের এক বলিষ্ঠ মাধ্যম।
ভেতর থেকে বদলে যাওয়ার সাধনা। তাই তো রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন-‘সিয়ামরত অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশালীন ও অর্থহীন কথাবার্তায় লিপ্ত না হয়।
কেউ যদি তাকে অশালীন কথা বলে কিংবা তার সঙ্গে অকারণে বাদানুবাদে লিপ্ত হতে চায়, তবে সে যেন এ কথা বলে দেয়, আমি রোজাদার।’ (বুখারি)।
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে রোজা রেখেছে, অথচ মিথ্যাচার পরিহার করেনি, তার কৃত্রিম পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই।’ বস্তুত যে সিয়াম তাকওয়া ও হৃদয়ের পবিত্রতাশূন্য এবং চারিত্রিক মাহাত্ম্য ও চিন্তার বিশুদ্ধতা বঞ্চিত, সে সিয়াম হচ্ছে প্রাণহীন দেহ; যা শুধু দুর্গন্ধই ছড়ায়।
শুধু শুধু উপবাস থাকার নাম রোজা নয়। বরং উপবাস থাকাসহ সব পাপাচার থেকে বিরত থাকার নামই হলো রোজা। অতএব রোজাকে যদি সব ধরনের গুনাহ থেকে পবিত্র রাখা যায়, তাহলে রোজা সব ধরনের অকল্যাণকর কাজ থেকে বিরত রেখে আল্লাহপাকের খাঁটি বান্দা হিসাবে রোজাদারকে গড়ে ওঠার অপূর্ব সুযোগ করে দেয়।
রমজানের বরকতে রোজাদার বান্দা তাকওয়ার জীবন লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করে। রমজান মাসের রোজা দেহ-মনের পবিত্রতা অর্জনের জন্য, গুনাহ মাফ করার জন্য এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সান্নিধ্য হাসিল করার জন্য অনেক বড় একটা ইবাদত। যে ইবাদত অন্য সব নবির উম্মতের জন্য প্রযোজ্য ছিল।
যেই অপূর্ণতা এবং আমলের ঘাটতি এতদিনে আমাদের হয়ে গেছে, তা এখন পুষিয়ে নেওয়া দরকার। গাফিলতি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে এখনই আল্লাহমুখী হওয়া খুব জরুরি।
এক মাসের সিয়াম সাধনার মূল কথা হলো, পবিত্র এ মাসে মানুষ দৈহিক খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে আধ্যাত্মিক খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে এবং তার নফসের গতিমন্থর করে আধ্যাত্মিক পথচলার গতি বেগবান করবে। এভাবে দেহ ও আত্মা উভয়ের ভারসাম্য ঠিক হয়ে সে খাঁটি মুমিন বান্দা হয়ে উঠবে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, আউয়ালুহু রাহমাতুন। প্রথম দশক রহমতের। আওসাতুহু মাগফিরাতুন। মাঝের দশক ক্ষমার। ওয়া আখিরুহু ইতকুম মিনান্নারি। শেষের দশক দোজখের আগুন থেকে মুক্তির।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভী (রহ.) বলেন, মানুষ তিন ধরনের হয়। সেজন্য মাহে রমজানকেও তিন ভাগে ভাগ করে পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন আল্লাহতায়ালা। এক ধরনের মানুষ হলো গুনাহ থেকে মাসুম বা পাপমুক্ত, তারা হলেন নবি-রাসুল আলাইহিস সালাম। গুনাহ থেকে মাহফুজ বা নিরাপদ মানুষ হলেন সিদ্দিক শোহাদা সালেহিন। এদের ওপর রমজানের শুরু থেকেই রহমত বর্ষিত হয়।
আরেক ধরনের মানুষ-যারা আমলে সালেহ করে আবার নফসের তাড়নায় ছোটখাটো গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। তারা দশ দিন সিয়াম পালনের পর রমজানের অসিলায় ক্ষমা পেয়ে যায়। তৃতীয় ধরনের মানুষ হলো, যারা গোনাহের সাগরে ডুবে আছে। তারা বিশ দিন সিয়াম পালন করে প্রভুর কাছে কান্নাকাটি করার ফলে মাফ পেয়ে যায়।
তাই মাগফিরাতের এ শেষ সময়ে আমাদের দৃঢ়সংকল্প করতে হবে যে, আমরা রমজানের অফুরন্ত কল্যাণ থেকে অবশ্যই উপকৃত হব। বাকি আর যে কয়টি দিন আছে, একটি মুহূর্তও অবহেলায় নষ্ট করব না। পবিত্র এ মাসে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশিক্ষণ কাজে লাগাব।
মুফতি তানজিল আমির
লেখক : তরুণ আলেম ও ধর্মীয় গবেষক
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।