শনিবার ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

ভূমিকম্প কেড়ে নিয়েছে সব, পিছু ছাড়ছে না আতঙ্ক

প্রকাশিত : ০৭:০৫ পূর্বাহ্ণ, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার ৭৯ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

তুরস্কের গাজিয়ানতেপ প্রদেশের উপশহর ইবরাহিমলি ভূমিকম্পের তাণ্ডবলীলার শিকার। শহরটির রাস্তার পাশের সারি সারি বহুতল ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ভয়াবহ ভূমিকম্প কারও প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। কাউকে হয়তো সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে। ইবরাহিমলি শহরের ধ্বংসস্তূপের পাশে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মোহাম্মদ সালমানকে। ভূমিকম্পের তাণ্ডবলীলা দেখতে নয়, কঠোর শ্রমে যা কিছু তিনি গড়েছিলেন তা হারানোর স্থানটুকু বারবার দেখছিলেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের সামনে প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে তিনি অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সালমান বলেন, অনেক কষ্টে তিনি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। চোখের সামনে সব ধ্বংস হয়ে গেল। ধ্বংসযজ্ঞ থেকে একমাত্র সন্তান মেহমেতকে অক্ষত বাঁচাতে পারলেও স্ত্রীকে অক্ষত উদ্ধার করতে পারেননি। তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। পরিবারের তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মাদ ইমরান বলেন, ছোটখাটো ব্যবসা করে জমানো টাকা এবং গ্রামের জমি বিক্রি করে শহরে ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছিলেন। এখন সব শূন্য। একমাত্র সন্তান নিহত হওয়ায় জীবনটাও শূন্য হয়ে গেছে। এরকম অসংখ্য মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও দুর্দশার গল্প ইবরাহিমলিজুড়ে। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের কান্না থামছে না।

৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশ দুটিতে এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তাদের উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে, প্রতিদিন এক হাজার লাশ দাফন করা হচ্ছে বলে আলজাজিরা জানিয়েছে। জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথের দাবি-ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়াতে পারে। স্কাই নিউজকে তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচের অবস্থা সঠিকভাবে অনুমান করা কঠিন। তবে আমি নিশ্চিত মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। বর্তমান সংখ্যার চেয়ে এটি দ্বিগুণ বা আরও বেশি হতে পারে। বিধ্বস্ত এলাকায় ছয় মাস কাজ করবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

গাজিয়ানতেপ প্রদেশে শতাধিক বহুতল ভবন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অসংখ্য ভবনে ফাটল ধরেছে। ফাটল ধরা ভবনগুলোয় বসবাস না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভবনগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ প্রদেশের ক্ষতিগ্রস্তদের অনেককে মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার ও ছাত্রাবাসে স্থান দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি ছাত্রাবাস ও মসজিদে গিয়ে দেখা যায়-শত শত মানুষ অবস্থান করছেন। গাজিয়ানতেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে তিন শতাধিক ব্যক্তি রাত্র যাপন করছেন। শিক্ষার্থীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকার, বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আশ্রয় নেওয়া আদনান জানান, তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি এখন মসজিদে থাকছেন। তিনি বলেন, চোখের সামনে মাত্র দুই মিনিটে তার বাসস্থান চুরমার হয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যরা কোনোরকমে বাঁচলেও তারা প্রিয়জন হারিয়েছেন। কথা বলতে গিয়ে তিনি বারবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। মসজিদের তৃতীয়তলায় আশ্রয় নিয়েছেন শতাধিক নারী। আসমা বেতুল জানান, এখানে পুত্রবধূ, ছোট্ট দুই নাতি ও মেয়ে আছে। ছেলে থাকে প্রবাসে। তাদের ফ্ল্যাট ছিল, গাড়ি ছিল, মূল্যবান আসবাবপত্র ছিল। সবই চাপা পড়েছে।

ভূমিকম্পে প্রদেশটির খুশঘুর উপশহরেও বহু স্থাপনা ভেঙে গেছে। অনেকে নিহত হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভূমিকম্পের সময় অন্য শহরে থাকা আদেম এরল জানান, তার বৃদ্ধা মা ও ভাবি মারা গেছেন। শুধু গাজিয়ানতেপে নয়, ক্ষতিগ্রস্ত নয়টি প্রদেশের মসজিদ, ছাত্রাবাস ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের স্থান দিতে অক্ষত থাকা বিভিন্ন ভবনের বাসিন্দারাও এগিয়ে এসেছেন। এ যেন এক ভালোবাসার মূর্তপ্রতীক।

গাজিয়ানতেপ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরের শহর কায়সেরিতে ভূমিকম্প হানা দেয়। এখানকার প্রায় ১০টি বহুতল ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানকার বাঙালি শিক্ষার্থীরা সুস্থ আছে। শহরের এরজিয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি শিক্ষার্থী আনোয়ার জানান, বড় ভূমিকম্পের পর দফায় দফায় ভূমিকম্প হওয়ায় আমরা আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম। সরকার আমাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ায় আমরা নিরাপদ আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে। ছাত্রাবাসগুলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাময়িক আবাসস্থল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।     বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন।  নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।  নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন।  তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।  বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।   এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে।  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন। তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT