বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজেট সহায়তার দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় অনিশ্চিত

প্রকাশিত : ০৮:১৭ পূর্বাহ্ণ, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার ১০৮ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

আগের দেওয়া শর্ত পূরণ হয়নি। তাই আটকে আছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত বাজেট সহায়তার দ্বিতীয় কিস্তি ২৫ কোটি ডলার বা প্রায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

এই অর্থ আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ছাড়ের আশা করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে সরাসরি কিছু বলা না হলেও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, শর্ত পূরণ না হওয়ায় আপাতত দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে নতুন করে বাজেট সহায়তা হিসাবে অন্য একটি ফান্ড থেকে ৫০ কোটি ডলার বা প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে। তবে সেটি এখনও আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।

সূত্র জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের কাছে মোট ১২৫ কোটি ডলার বা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আছে নতুন করে ১০০ কোটি বা প্রায় ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর আগের প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার। তবে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সাড়া মেলেনি। আবেদন পাঠানোর প্রায় ৬ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ প্রসঙ্গে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একুশে ফেব্রুয়ারি ইআরডি চত্বরে কথা বলার সময় তিনি বলেন একটি অনুষ্ঠানে এসেছি এখনে কেন এসব প্রশ্ন?। তবে এটুকু বলতে পারি আলোচনা হচ্ছে।

ইআরডির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে সরকারের করোনা পুনরুদ্ধারে নেওয়া কর্মসূচিতে বাজেট সহায়তা হিসাবে ৫০ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ছাড় করা হয়েছে ২৫ কোটি ডলার। বাকি ২৫ কোটি ডলার চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছাড় করার কথা। এই ২৫ কোটি ডলার যাতে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর-২০২২) ছাড় করা হয় সে জন্য বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সাধারণত বাজেট সহায়তা আসে বেশ কিছু শর্ত পূরণসাপেক্ষে। করোনা মহামারি থেকে উত্তরণে গত অর্থবছর থেকে যে বাজেট সহায়তা দেওয়া হচ্ছে সেটি ‘বাংলাদেশ ফাস্ট রিকভারি অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি-১)’ কর্মসূচির আওতায়।

বিশ্বব্যাংক তাদের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে এ ঋণ দিচ্ছে। এ সময় শর্ত ছিল সরকারের রাজস্ব ও আর্থিক খাত সংস্কার। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর জন্য এমন একটা নীতিমালা তৈরি করা যাতে খেলাপি ঋণ কমে আসে। সেই সঙ্গে ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং এসইসি আইনে সংশোধনীর কথা বলা হয়। এছাড়া বিল্ডিং কোর্ড পরিবেশবান্ধব করা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আধুনিকায়ন, ভ্যাট আইন সংস্কার এবং ই-জিপি (ই-টেন্ডারিং) সম্প্রসারণ করা ইত্যাদি। এসব শর্তসাপেক্ষে প্রথম কিস্তি ছাড় করা হয়। কিন্তু সেইসব শর্তের বেশিরভাগ এখনো পূরণ হয়নি। বিশেষ করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (এসইসি) আইনের সংশোধনের বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তাই দ্বিতীয় কিস্তির বিষয়ে আলোচনায় যাচ্ছে না বিশ্বব্যাংক। এর ফলে বাকি ২৫ কোটি ডলার দ্রুত পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলানো এবং ডলার সংকট কাটাতে বিশ্বব্যাংকের কাছে জরুরি ভিত্তিতে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে নতুন করে চাওয়া ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোনো ফলাফল জানা যায়নি। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের একাধিক মিশন এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঢাকা সফর করে গেছেন। গত সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বাংলাদেশ সফর করেছেন। এটি এ দেশে তার প্রথম সফর ছিল। তিন দিনের সফরের সময় রাইজার বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তার এই সফরে সরকারের পক্ষ থেকে বাজেট সহায়তার বিষয়টি আলোচনা হয়। এ ছাড়া গত ২১ জানুয়ারি তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ। বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি এবং বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন অর্জন উদযাপন করতে তিনি ঢাকায় আসেন। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় উঠে আসে বাজেট সহায়তার বিষয়টি। এ সময় তার সঙ্গে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারও ছিলেন।

ইআরডির একাধিক সূত্র জানায়, ‘গ্রিন ফান্ড’ শীর্ষক এক তহবিল থেকে নতুন করে বাজেট সহায়তা হিসাবে ৫০ কোটি ডলার পাওয়ার জন্য জোর তৎপরতা চলছে। এর মধ্যে ২৫ কোটি ডলার পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। এর সঙ্গে আরও ২৫ কোটি ডলার পাওয়ার বিষয়েও চলছে আলোচনা।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বাজেট সহায়তার সিস্টেম হচ্ছে শর্ত পূরণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থছাড় হয়ে যাবে।

কিন্তু সরকার যেহেতু সেটি এখনও করেনি। বিশেষ করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংস্কার না হলে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় হবে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংককে জানানো হয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনীর কাজ চলছে। একটু সময় লাগবে। নতুন বাজেট সহায়তার বিষয়ে কাজ চলছে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT