বছরজুড়ে মশায় অতিষ্ঠ ঢাকাবাসী, কাড়ছে প্রাণ
প্রকাশিত : ০৮:২৮ পূর্বাহ্ণ, ২৬ নভেম্বর ২০২২ শনিবার ৪১ বার পঠিত
আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে মশা এবং মশা জাতীয় কীটপ্রত্যঙ্গের উপদ্রব বেড়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণে যে ধরনের গবেষণা, প্রস্তুতি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তার অনুপস্থিতি প্রকট। এ কারণে বছরজুড়ে রাজধানীবাসীকে ডেঙ্গিবাহিত এডিস এবং কিউলেক্স মশার উপদ্রব সহ্য করতে হচ্ছে।
ক্ষুদ্র এই মশা কেড়ে নিচ্ছে শত শত মানুষের প্রাণ। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রাণঘাতী মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ২০১৯ সালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল ডেঙ্গি, সেবার মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জন। এবার বছর পেরনোর আগেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪২ জন। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত্রের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৫ হাজার। গতকাল শুক্রবারও এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গি ভাইরাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকার মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিজ্ঞানভিত্তক উপায়ে পরিচালিত হচ্ছে না। এ কারণে কাক্সিক্ষত সাফল্য মিলছে না। বছরব্যাপী পরিকল্পনা অনুযায়ী যে ধরনের কাজ করা দরকার, এখানে সেসব হচ্ছে না। নেই পর্যাপ্ত বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ জনবলও। মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকলে কর্তারা, এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করেন না। যখন ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়ে যায় তখন নড়েচড়ে বসেন। মানুষের মন ভোলানোর জন্য দৃশ্যমান কিছু কাজ করেন, যা ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না।
এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার বক্সকালভার্ট ও কাভার্ড ড্রেন রয়েছে। যেগুলোতে দুই সিটি মশার ওষুধ ছিটাতে পারে না। পাশাপাশি প্লাস্টিক দ্রব্যসামগ্রী, পলিথিন, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনায় ওই ড্রেনগুলোতে ভরাট থাকে। দুই ভবনের মাঝখানের জায়গাগুলো আবর্জনার ভাড়াড়ে পরিণত হয়েছে। যে কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। এসব স্থানের জমাটবাঁধা পানিতে কিউলেক্স ভয়াবহরূপে বংশ বিস্তার করছে।
মশার প্রজনন কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করতে কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। এ ছাড়াও জলাশয়, খাল, নর্দমা ও যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক দ্রব্য ও ডাবের খোসার পানিতে ভয়াবহরূপে মশার বংশ বিস্তার ঘটছে। মশক নিধনে দুই সিটির পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। তারপরও নগরবাসীকে মশার ধকল সইতে হচ্ছে। এর কারণ বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে না সিটি করপোরেশন।
কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে বাংলাদেশে মশার প্রজনন ঘটছে। মশা নির্মূল করা সম্ভব নয়, এটা সত্য। তবে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিন্তু সে ধরনের কাজও তেমন একটা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন কাজ করছে। মশা নিয়ন্ত্রণের আন্তরিকতাও রয়েছে দুই মেয়রের। এরপরও কেন মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না-সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা দরকার। পাশাপাশি সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণের সব ধরনের টুলস ব্যবহার করা দরকার। সঠিক ব্যবস্থাপনার আলোক এসব করা সম্ভব হলে মশক নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি মেম্বার ড. জিএম সাইফুর রহমান বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো কার্যকরভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো মশক নিয়ন্ত্রণের কিছুটা আয়োজন থাকলেও অন্যান্য এলাকায় এডিস নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের কোনো ব্যবস্থা নেই। টেকসইভাবে এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে স্বতন্ত্র একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। যেটা দেশের সব এলাকার জন্য একযোগে কাজ করবে।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এডিস ও কিউলেক্স মশার প্রজনন ও সময়কাল বেড়েছে। সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ডিএনসিসি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সম্পাদন করতে একজন বিশেষজ্ঞকে ডিএনসিসিতে যুক্ত করা হয়েছে। তার পরামর্শে আমরা কাজ শুরু করেছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, এডিস মশা কমে যাচ্ছে। যার প্রভাবে ডেঙ্গি আক্রান্তের হারও কমছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এডিসের উপদ্রব থাকবে না। খুবই কম পরিমাণ আক্রান্ত হতে পারে। এবার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মৌসুমের শেষের দিকে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। সে কারণে শেষের দিকে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।