প্রশাসনে সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে একাট্টা হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা
প্রকাশিত : ০৭:২৮ পূর্বাহ্ণ, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার ৯০ বার পঠিত
প্রশাসনে সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাভোগী আমলাদের বিরুদ্ধে এবার একাট্টা হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। কমিটি গঠনের মাধ্যমে শিগগির তারা নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দেবেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পাওয়া ছাড়াও প্রশাসনে কর্মরত বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যারা মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী এবং যাদের মধ্যে অগাধ দেশপ্রেম রয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে তাদের এ কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হবে না। এছাড়া সরাসরি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হলেও যারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এবং প্রগতিশীল, সৎ ও দক্ষ হিসাবে পরিচিতি তাদের পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন। এ উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, তারা কমিটির গঠনের প্রাথমিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছেন। কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে ২৬ মার্চের মধ্যে। কেন এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, কয়েকটি যৌক্তিক কারণে তারা এ ধরনের একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
তারা জানান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে ৩০% কোটা চালু করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে সময় এই কোটার ভিত্তিতে ২০তম ব্যাচের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগদান করেন ২০০১ সালের ৫ মে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, গত ২২ বছরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বেশিরভাগ অবহেলিত। যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। বিএনপি সরকারের সময়ে তাদের অনেকে এসিল্যান্ড ও ইউএনও হতে পারেননি। ফলে বর্তমান সরকারের আমলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডিসি হতে পারেননি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ১৪ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান হয়নি তাদের। উলটো আওয়ামী পরিবারের পরীক্ষিত ও দক্ষ কর্মকর্তাদের অনেককে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। শুরু থেকে একশ্রেণির প্রভাবশালী সিনিয়র কর্মকর্তাদের গভীর চক্রান্তের কারণে রেড কিংবা ব্ল–জোনের কোথাও তারা ঢুকতে পারেননি। বরং সুযোগ হয়েছে হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের। যারা রাতারাতি বিএনপি-জামায়াতের মুখোশ খুলে ঢুকে পড়েছে সরকারি দলের শিবিরে। বেছে বেছে তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করা হয়েছে। বেশিরভাগ প্রাইজপোস্টিং তাদের দখলে। এর কারণ হলো-সরকারের স্বার্থবিরোধী হলেও তাদের দিয়ে সব কাজ করানো সম্ভব। এমনকি তারা দুর্নীতির সাক্ষী ও সহযোগী হলেও সমস্যা নেই।
সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা মনে করেন, এদের কারণে বদনাম হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের। বিশেষ করে তাদের কাছে খবর আছে-এসব সুবিধাভোগী আমলা ইতোমধ্যে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। অনেকে স্ত্রী-সন্তানদের বিদেশে পুনর্বাসন করেছেন। নিজেরাও গোপনে উন্নত দেশে পিআর কিংবা নাগরিকত্ব নিয়েছেন। ফলে কখনো যদি আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়ে সংকট দেখা দেয়, তাহলে সবার আগে এরাই দেশ ছাড়বে। কেউ কেউ গোপনে বিরোধী শিবিরেও যোগাযোগ রাখছে। কিন্তু সুবিধাভোগী না হলেও কোনো কারণে সরকারের পরিবর্তন হলে সব অত্যাচার-নিপীড়ন নেমে আসবে তাদের ওপর। এজন্য তারা এখন ঐক্যবদ্ধভাবে সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে চান।
একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সবাই তো আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পোস্টিং পাবেন না। কিন্তু যারা এতদিন প্রাইজপোস্টিংগুলো ভোগ করে এসেছেন তাদের মধ্যে আমি তো কোনোদিন ছিলাম না। কিন্তু আমাদের কাউকেও খুঁজে পায়নি। তাহলে কী হলো-আমি-আমরা কেউ তো সেসব পোস্টিং পেলাম না। সব তো উনারা নিজেদের মতো করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু পোস্টিং লক্ষ করলেও একই চিত্র দেখা যাবে। ওই সিন্ডিকেটের বাইরে কারও জায়গা হয়নি। অথচ আমাদের বাবা-চাচারা খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। বাবা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। তাহলে কী আমাদের চেয়ে উনারা বেশি আস্থাভাজন হয়ে গেলেন। অবশ্য আমরা এও জানি, এসব পোস্টিং কারা কীভাবে দিচ্ছেন।’
অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কীভাবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পেছনে ফেলে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে-তা শুধু একটি উদাহরণ দিলেই স্পষ্ট হবে। ২০তম ব্যাচকে ভাগ করে ৫ মাসের ব্যবধানে দুই দফায় যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। কেননা প্রথম দফায় তাদের অনেকে পদোন্নতি পাননি। আবার লেফটআউট হিসাবে ২১ ব্যাচের সঙ্গে কয়েকজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর ফলে দেখা যাবে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির সময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বেশিরভাগ প্রথম ধাপে পদোন্নতি পাবেন না। ২১তম ব্যাচের সঙ্গে তাদের পদোন্নতি নিতে হবে।’ তারা বলেন, এছাড়া স্বনামধন্য বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতিবঞ্চিত হতে হয়েছে। পদোন্নতি বিধিমালার সব শর্ত পূরণ থাকলেও তাদের বাদ রাখা হয়।
তারা মনে করেন, সরকারের মেয়াদ এক বছর বাকি থাকতে প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো-যারা এতকাল সরকারের কাছ থেকে নানারকম সুবিধা নিয়েছেন তাদের অনেকে গোপনে এসব ষড়যন্ত্রে যুক্ত। তাই প্রশাসনকে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনাসহ মেধাবী ও পেশাদার আমলাতন্ত্র গড়ে তুলতে তারা চাকরিবিধি মেনেই সক্রিয় হচ্ছেন। কারণ তাদের ধমনিতে মুক্তিযোদ্ধার রক্ত প্রবাহিত। তাই সত্যিকারার্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে তারা সরকারকে কার্যকর সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে তৃতীয় ও চতুথ শ্রেণির কর্মচারী ছাড়া অন্যান্য পদে কোটা বহাল নেই। নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর ফলে ৪০তম বিসিএস থেকে এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগ হচ্ছে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।