দশ টাকা কেজি চাল বিতরণে মানা হচ্ছে না ‘সামাজিক দূরত্ব’
প্রকাশিত : ০১:৪৪ অপরাহ্ণ, ৯ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার ১৯৩ বার পঠিত
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এক আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। এর ভয়ঙ্কর থাবায় সারাবিশ্ব নাস্তানাবুদ। কারণ এই ভাইরাসের প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। ভাইরাসটি ইতোমধ্যে হানা দিয়েছে বাংলাদেশেও। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ জনসমাগম এড়ানো। এ লক্ষ্যে সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, সামাজিক, রাজনৈতিক সকল অনুষ্ঠান বন্ধ এমনকি মুসল্লিদের মসজিদে যেতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
তবে ঝুঁকি আছে জানা সত্ত্বেও শত শত লোক জড়ো করে ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ করছেন ডিলাররা। এমনকি সামান্যতম নিরাপত্তার দূরত্বও মানা হচ্ছে না অনেক স্থানে। ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম, মাদারীপুর, লালমনিরহাট, ঝালকাঠি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, যশোরসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিলারের দাবি, তাদের উপজেলা থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চাল দেয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আবার অনেকে বলছেন খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে এর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
বিভিন্ন জেলার ডিলার পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী সকাল ৮টার আগে থেকে ভিড় জমিয়েছেন উপকারভোগীর। নির্দিষ্ট দূরত্ব তো দূরে থাক তারা যেন খোশগল্পে মেতেছেন। মুখের মাস্ক লুঙ্গির গাটিতে। পান খাচ্ছেন অধিকাংশ বয়স্করা। এক হাত থেকে আরেক হাতে পাল্টিয়ে ধূমপানও চলছে সমানতালে। মনে করোনা আতঙ্ক থাকলেও এটি প্রতিকারে কোনো প্রকার নিয়ম মানতে নারাজ তারা।
ডিলাররা বলছেন, আমরা প্রশাসনের নির্দেশনা মানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু গ্রামের উপকারভোগীদের কারণে সেই নির্দেশনা শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ রহিম (৪০) নামে এক ব্যক্তি বলেন, কেউ কোনো নিয়ম মানছেন না। দূরুত্ব না মানার কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারে হাজার হাজার মানুষ। এভাবে চাল বিতরণের নামে সবাইকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
স্বপন মোল্লা নামে কুড়িগ্রামের এক উপকারভোগী বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই। কাজ বন্ধ, খাব কী? এখানে এসে চাল না নিলে পরিবার না খেয়ে থাকবে। না খেয়ে খেয়ে থেকে মৃত্যুর ভয় পেয়ে লাভ আছে? তা ছাড়া কেউ তো আর আমাদের বাড়ি গিয়ে চাল দিয়ে আসবে না।
ঝালকাঠির রমিজ উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি বলেন, অনেক মানুষ একসঙ্গে হলে এ রকম একটু অনিয়ম হবেই। মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কথা মানুষ ঠিক মতো শুনতে চায় না। প্রশাসন যদি কঠোর হতো তাহলেই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় থাকত।
সত্তোরোর্ধ খাজা হামিদ আলী বলেন, বাঁচা-মারার মালিক আল্লাহ। করোনার ভয় পেয়ে লাভ নেই। আল্লাহ আমাদের বাঁচাবেন। এ জন্য সব সময় আল্লাহকে স্মরণ রাখি। কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের সদর ইউনিয়নের ডিলার মোক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, করোনা মোকাবিলায় চাল বিতরণে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তাই পূর্বের ন্যায় চাল বিতরণ করেছি। আলাদাভাবে কোনো সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
জানতে চাইলে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম নামে এক ডিলার বলেন, খাদ্য অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি। ছয় ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করেছিলাম। প্রথম দুই দিন মানুষের চাপের কারণে দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। নির্দেশনা পেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল পৌঁঁছে দেবেন বলেও জানান তিনি।
চৌগাছা উপজেলার ফিরোজ হোসেন নামে এক ডিলার বলেন, আমরা দূরত্ব বজায় রেখেই চাল দিয়েছি। গ্রামপুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় নির্দেশনা অনুযায়ী সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। আমার এখানে কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।