ঢাকার সড়কে বিশৃঙ্খলা
প্রকাশিত : ০৭:৫০ পূর্বাহ্ণ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার ৪৩৭ বার পঠিত
ঢাকার বেশির ভাগ সড়কের দুপাশ ভাঙা-শ্রীহীন। কোথাও কোথাও সড়কের পিচ উঠে বেরিয়ে এসেছে পাথর। দুই পাশে আবর্জনার স্তূপ। এসবের মধ্যেই যেখানে সেখানে হকার, সিএনজি, রিকশা-বাস-ট্রাকের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে মোটরসাইকেল স্টপেজ। ফলে রাজপথে নগরবাসীর চলাচল দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। অথচ এসব বিশৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব যাদের ওপর রয়েছে তাদের ভূমিকা নীরব।
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন, সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে অবহেলায় ঢাকা এখন বসবাসের অযোগ্য নগরীর তালিকায়। এ শহরকে বাসযোগ্য করতে ভাসমান দোকানপাট, হকার উচ্ছেদ, নিয়মাফিক ভবন নির্মাণের পাশাপাশি সড়ক সংস্কার-রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বশীলদের মনিটরিংয়ের মধ্যে আসতে হবে। অর্থাৎ সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে জবাবদিহিতা নেই। ফলে ঢাকার অধিকাংশ সড়ক ও অলিগলির রাস্তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। বিশৃঙ্খলায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঢাকার মূলসড়ক, অলিগলি, বাস, চালক ও চলাচলের ব্যবস্থাপনা কোনোটিই ঠিকঠাক নেই। সড়কে বাস নামানোর অনুমতি দেয়া হচ্ছে কোনো রকম সমীক্ষা ছাড়া, অপরিকল্পিতভাবে।
এর ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও মোড়ে এমন এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার হয়ে প্রাণ গেছে কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের। এর আগে ২০১৫ সালের জুনে কারওয়ান বাজারের স্টার কাবাবের সামনে দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে একটি বাস উল্টে গিয়ে প্রাণ হারান এক যুবক। ২০১৪ সালে মারা যান সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরী।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকার প্রবেশপথ আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা জসিমউদ্দিন পর্যন্ত সড়কের অবস্থা নাজুক। মহাখালী, সাতরাস্তা, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা ও আনন্দবাজার পর্যন্ত সড়ক ভাঙা থাকায় পথচারীদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ছে। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে আজিমপুরে রাস্তার উপর বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছে। এ নিয়ে দিশারী, স্বাধীন, ইলিশ, এয়ারপোর্ট-বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গ্রেট বিক্রমপুর পরিবহনসহ চলাচল করা প্রায় সব বাসের যাত্রীরা সড়কের উপরে বাসস্ট্যান্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ। দেখা মিলেছে রাস্তার উপরে ভ্যানে কাঁচামাল বেচাকেনা, মোড়ে মোড়ে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড। যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ডাকছেন চালকরা।
হাতিরপুলে ফুটপাতের কাঁচাবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এই ব্যবসা অবৈধ জায়গায় এটা ঠিক। তবে এজন্য কর্তৃপক্ষকে মাসে মাসে টাকা দেয়া হয় বলে জানান তারা।
স্থানীয়রা জানায়, সবসময় আজিমপুরে রাস্তায় বাস স্ট্যান্ড করে রাখা হয়। সারি সারি বাসের কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটি লেন বন্ধ থাকে। এতে পুরো নিউমার্কেট এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সড়ক ভাঙা ও বিশৃঙ্খলার বিষয়ে দুই সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, নিয়মিত ভাঙা রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি অলিগলির রাস্তার জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আশা করি, চলতি বছরের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন যেসব সড়ক উন্নয়ন দরকার, তা করা হবে। সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের অভিযোগ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের কারণে বিভাজকগুলোর এমন দশা। সড়কের উপর বাসস্ট্যান্ড বসানোর সুবিধার্থে প্রভাবশালী মহলটি আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। ঢাকার বেশিরভাগ সড়কের অবস্থা ভাঙাচোরা আর বাসের তালিকায় কিছুদিন সিটিং সার্ভিস ভাড়া নিলেও এখন সেটি আর নেই। বাস মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে ইচ্ছামতো ভাড়া নিচ্ছেন। বাসেরই বাইরের রং-বাকল অক্ষত নেই। বাসে ভাড়ার তালিকা নেই।
সম্প্রতি ডিএসসিসির বাজেট অধিবেশনে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন দাবি করেন, প্রায় ৯০ শতাংশ সড়ক এখন চলাচলের উপযোগী। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো।
কলাবাগানের কাউন্সিলর সালাউদ্দিন আহমেদ মেয়রকে বলেন, আমার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্ত রাস্তাই খারাপ। পাঁচ বছর ধরে ওয়ার্ডে কোনো উন্নয়নকাজ হয় না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, যারা সড়কের শৃঙ্খলা দূর করবেন তাদের সড়কের দিকে কোনো চোখ নেই। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে, যানজট হয়, বিশৃঙ্খলা বাড়ে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।