সোমবার ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৩ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

ডিএসসিসির ত্রাণেও সেই সরদার!

প্রকাশিত : ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ, ৬ এপ্রিল ২০২০ সোমবার ৬১০ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

স্বাস্থ্য কিংবা ভাণ্ডার কর্মকর্তা নন, সমাজকল্যাণ অথবা বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তাও নন, তবুও কোনো দুর্যোগকালীন সময়ে রহস্যজনক কারণে রাজস্ব বিভাগের মূল পদ উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হলেও চলতি দায়িত্ব থাকা প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদার।

এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি, তাকে করা হয়েছে আহ্বায়ক। তিনি বিসিএস কর্মকর্তা না হলেও কমিটিতে প্রায় ডজন খানেক বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে তার অধীনেই।

করোনা উপলক্ষে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে হতদরিদ্রদের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ জরুরি খাদ্য বিতরণে গঠিত এ কমিটিতে মো. ইউসুফ আলী সরদারকে আহ্বায়ক করায় সংস্থাটির অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন আবারো সেই সরদার! আবার কেউবা হয়েছেন ক্ষুব্ধ।

জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকে বস্তিবাসী, পথবাসী, ভাসমান ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে মালামাল বিতরণে ডিএসসিসির সচিব মো. মোস্তফা কামাল মজুমদারের গত ২৫ মার্চ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ১৩ নামের তালিকা বিশিষ্ট একটি কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। যার স্মারক ৪৬.২০৭.০০০.০৩.০২.৫৪৪.২০২০-১৭০।

আর এ তালিকার ৩নং ক্রমিকে ডিএসসিসির সকল আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে। আবার এই তালিকার ৬নং ক্রমিকে যার নাম দেয়া হয়েছে তার মূল পদ উপ-কর কর্মকর্তা এবং চলতি দায়িত্ব কর কর্মকর্তা— এসব তথ্য গোপন করে তালিকায় তার নামের সাথে শুধুমাত্র রাজস্ব কর্মকর্তা (অ.দা.), ডিএসসিসি লেখা রয়েছে।

এছাড়া একজন উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তার অধীনে বিসিএস ক্যাডারদের সদস্য করায় ডিএসসিসির অনেকেই কমিটি গঠনকারীদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এদিকে করোনা উপলক্ষে কমিটি গঠনের পরই কমিটির আহ্বায়ক ইউসুফ আলী সরদারকে ডিএসসিসির কোষাগার থেকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার একটি অফিস আদেশ দেয়া হয় বলে জানা গেছে।

এছাড়া আরও একাধিক কর্মকর্তাকে এভাবে পাঁচ লাখ এবং আট লাখ করে দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু এ টাকা কি উপলক্ষে দেয়া হবে তা জানা যায়নি।

এ ব্যাপারে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমার কাছে এ রকম একটি ফাইল এসেছে তবে ফান্ড না থাকায় আমি তাদের টাকা দিতে পারিনি। কিসের জন্য তাদের এ টাকা দিতে বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ফাইল না দেখে বলতে পারবো না।

সূত্র মতে, শুধু এবারই নয়, তার ভাগ্য এতটাই সুপ্রসন্ন যে, গত বছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময়ও নগরীতে অ্যারোসল সরবরাহ ও বিতরণের দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল তাকে। এসব অ্যারোসল সরবরাহের খবর খোদ সিটি কর্পোরেশনের ভাণ্ডার কর্মকর্তা নিজেই জানেন না।

এই অ্যারোসল বিতরণের দায়িত্ব মূলত স্বাস্থ্য বিভাগে থাকার কথা। কিন্তু মেয়রের পছন্দের লোক বিধায় ইউসুফ আলী সরদারকে দেয়া হয়েছিল। যার ফলে কেনাকাটা থেকে প্রতিটি খাতে ছিলো অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ।

মেয়রের অতি ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে গত প্রায় সাড়ে চার বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে ডিএসসিসির বিভিন্ন বিভাগের অঘোষিত কর্তৃত্ব করে যাচ্ছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া একজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু চাকরি করি তাই নন বিসিএস কর্মকর্তার নেতৃত্বে কাজ করতে আত্মসম্মানে লাগলেও আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাবো।

তিনি বলেন, করোনা উপলক্ষে গঠিত এ কমিটির আহ্বায়ক চরম বিতর্কিত হলেও ডিএসসিসিতে তিনি এতটাই ক্ষমতাধর যে তার বিরুদ্ধে কথা বললেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। এর একাধিক প্রমাণও রয়েছে। তার দক্ষিণ সিটিতে রয়েছে বিশাল এক সিন্ডিকেট।

তাছাড়া তিনি বর্তমান মেয়রের অতি ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন। যার ফলশ্রুতিতে গতবছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় তাকে নগরীতে অ্যারোসল বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ এবং ভাণ্ডার শাখা কিছুই জানতো না। অথচ এসব বিষয় শুরুতেই তাদের গোচরে থাকার কথা। এ নিয়ে গত বছর ব্যাপক সমালোচনাও হয়েছিল বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মেয়র স্যারের ভুল সিদ্ধান্ত আর ইউসুফ আলী সরদারের সিন্ডিকেটের কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে অনিয়ম-দুর্নীতি বাড়ছে।’

অভিযোগ উঠেছে, ক্রয়কৃত অ্যারোসলের গায়ে লাগানো কাগজের লেভেলে ডিএসসিসির মনোগ্রাম এবং এসিআই কোম্পানির মনোগ্রাম ও নাম ঠিকানা রয়েছে।

তবে এই অ্যারোসলের লেভেলের কোথায়ও উৎপাদনের তারিখ ছিলো না। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং মূল্য পর্যন্তও উল্লেখ ছিলো না।

এই অ্যারোসলের গায়ে মূল্য লেখা না থাকায় গত বছর এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল খোদ দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।

এ ব্যাপারে ডিএসসিসির সচিব মো. মোস্তফা কামাল মজুমদারের মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৩ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT