জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল
প্রকাশিত : ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ, ২০ নভেম্বর ২০২৩ সোমবার ৯ বার পঠিত
দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিলকারী পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় রোববার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন। এর ফলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। আদেশের পর রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, নিবন্ধন বাতিলে রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় দলটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকল না। তাই জামায়াত কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো মিছিল-মিটিং করতে পারবে না। জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল খারিজ হলেও সংবিধান অনুযায়ী দলটি স্বাভাবিক রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। এর আগে ১২ নভেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৯ নভেম্বর শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করেছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে জামায়াতকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে রিট আবেদনকারীদের করা আবেদন শুনানিতে আপিল বিভাগ শুনানির এই দিন ধার্য করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় রোববার আপিল ও আবেদন শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে জামায়াতের করা আপিলের পক্ষে নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য ছয় সপ্তাহ সময়ের আবেদন দেন আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, শুনানি মুলতুবির আবেদন দেওয়া হয়েছে। তখন আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমানের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আবেদন (সময় আবেদন) রিফিউজ (প্রত্যাখ্যান) করছি। আপনি প্লেস (আপিল) করেন।’
একপর্যায়ে আদালত বলেন, আপিলকারীর অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড কোথায়? তখন জিয়াউর রহমান বলেন, অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন। তিনিও উপস্থিত নেই। পরে আদালত বলেন, ‘ডিসমিসড ফর ডিফল্ট’। মূল মামলার আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে চলা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটির মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন ও জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন গ্রহণ করেননি সর্বোচ্চ আদালত। আদালতে জামায়াতের বিরুদ্ধে করা আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও আহসানুল করিম।
রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা পরবর্তী সময়ে আপিল হিসাবে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর দলটির পক্ষ থেকে লিভ টু আপিল (সিপি) করা হয়। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
‘এক দশক পর সমাবেশের অনুমতি পেল জামায়াত’ ও ‘নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জামায়াতে ইসলামীর, এক দশক পর ঢাকায় সমাবেশ’ এমন শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ১০ জুন প্রতিবেদন ছাপা হয়। এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে মিছিল, সভা, সমাবেশসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে জামায়াতকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ অন্যরা গত জুনে পৃথক আবেদন করেন।
সর্বশেষ ১২ নভেম্বর আবেদন শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আপিল বিভাগ জামায়াতের করা লিভ টু আপিলটি রিডানডেন্ট (প্রয়োজনীয়তা নেই) ঘোষণা করে দলটির করা আপিল শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর রাখেন। জামায়াতের করা আপিলের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে জামায়াতকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদন দুটিও কার্যতালিকায় ওঠে।
জামায়াতের দপ্তর সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও হরতালের কারণে তাদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শুনানি মুলতুবি করার আবেদন দিয়েছিলেন। মুলতুবির আবেদনটি আদালত আমলে নেননি, খারিজ করে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যে আপিল করা হয়েছিল, সেই আপিলও ডিসমিসড ফর ডিফল্ট হিসাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। আপিল ডিসমিস হওয়ার কারণে তাদের (চাঁদপুরীসহ অন্যদের) দুটি আবেদন শুনানির জন্য থাকবে না।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে আইনি কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ। তিনি বলেন, ‘এখানে নিবন্ধনের বৈধতা নিয়ে মামলা ছিল। আদালত নিবন্ধন নিয়ে মতামত দিয়েছেন। তবে স্বাভাবিকভাবে জামায়াতের রাজনীতি বহাল থাকবে। সংবিধান অনুযায়ী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। রাজনীতি করার সুযোগ জামায়াতে ইসলামী পাবে, অব্যাহত আছে।’
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।