চীনে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ
প্রকাশিত : ০৪:৪৪ অপরাহ্ণ, ২৮ নভেম্বর ২০২২ সোমবার ১৩৩ বার পঠিত
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শাসিত কমিউনিস্ট সরকারের শূন্য কোভিড নীতিতে এবার ফুঁসে উঠেছে চীন।
করোনা নিয়ন্ত্রণের কঠোর লকডাউনের বিরুদ্ধে কয়েকদিন থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে রাজধানী বেইজিংসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে।
অন্ধকার শীতল রাতেই ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমেছে শহরের বাসিন্দারা। জাতীয়সংগীতে ছেয়ে গেছে অলিগলি। শনিবার ভোররাতেই শত শত মানুষ জড়ো হতে শুরু করে সাংহাইয়ের উলুমুকি রাস্তায়।
তার পরেই শুরু করে সরকারবিরোধী স্লোগান- ‘স্বাধীনতা চাই, আর নয় কোভিড পরীক্ষা/শি জিনপিং ক্ষমতা ত্যাগ করুন/সিসিপি (চীনা কমিউনিস্ট পার্টি) ক্ষমতা ছাড়।’ রোববার এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। খবর এএফপি, সিএনএন, আলজাজিরা, স্কাই নিউজের।
চীনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে বিরোধিতার ঘটনা দেশটিতে বিরল। বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলের রাজধানী উরুমকিতে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একটি আবাসিক ভবনে এ ঘটনা ঘটলে তাতে প্রাণ হারান প্রায় ১০ জন। ২১ তলা পর্যন্ত আগুনের ধোঁয়া পৌঁছে যায়। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ভবনটি ছিল লকডাউনের আওতায়।
এই মৃত্যুতেই ফুঁসে উঠেছে চীন। দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে কঠোর লকডাউনকে দায়ী করছে জনগণ। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি খানিকটা কম হলেও তিন বছরের পরেও এর প্রাদুর্ভাব চীনে বেড়ে চলছে। দীর্ঘ দিন দেশটিতে চলছে কঠিন লকডাউন।
কঠোর লকডাউন ‘জিরো কোভিড নীতির আওতায় থাকার পরেও শনিবারও চীনে রেকর্ড পরিমাণ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। যার সংখ্যা গত কয়েক মাসকে ছাড়িয়ে প্রায় ৪০ হাজারে দাঁড়ায়। এ নীতিতে জনজীবন হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ।
অর্থনীতি পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে। দুইয়ে মিলে আগে থেকে ক্ষিপ্ত ছিল নাগরিকরা। সেই আগুনেই ঘি ঢালল এই ভবন অঘটন। তবে বিক্ষোভের সূত্রপাত কখন হয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি কেউই।
তবে অনেকের মতে, শুক্রবার থেকেই চীনজুড়ে বিক্ষোভ দেখা যায়। আবার অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান শনিবার মধ্যরাতের কথা। তাদের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে বিশাল জনতার একটি দল চিৎকার করছে এবং সাদা কাগজের টুকরো ধরে রেখেছে। এটি মূলত সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। তারা বেশ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের মুখোমুখি হয়েছিল। অনেক বিক্ষোভকারীকেই উঠিয়ে নিয়ে গেছে পুলিশ।
নজরদারি চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। একজন স্নাতক পড়ুয়া আন্দোলনকারী এএফপিকে জানান, অভিজাত পিকিং ইউনিভার্সিটিসহ চীনের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই শনিবার রাতভর বিক্ষোভ হয়। কর্তৃপক্ষের ভয়ে নাম প্রকাশ না করে এক শিক্ষার্থী জানান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালজুড়ে বেশ কিছু কোভিডবিরোধী গ্রাফিতি শোভা পেয়েছিল। পরে সেই গ্রাফিতি ঢেকে ফেলা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রাউডসোর্স করা তালিকায় দেখা গেছে যে, ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওগুলোতে বলা হয়েছে যে, তারা পূর্বে নানজিং, দক্ষিণে গুয়াংজু, উত্তরে বেইজিং এবং অন্তত পাঁচটি শহরে বিক্ষোভকারীদের সাদা প্রতিরক্ষামূলক স্যুট পরে পুলিশের সাথে বাগ্বিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায়।
এমনকি তারা আশপাশের এলাকাগুলোকে সিল করার জন্য ব্যবহৃত ব্যারিকেডগুলো ভেঙে দেয়। সবচেয়ে বেশি সমাগম দেখা যায়, নানজিং কমিউনিকেশনস ইউনিভার্সিটিতে। এ ছাড়াও ছোট ছোট বিক্ষোভ চলছে চীনের প্রায় সবখানেই। জিয়ান, গুয়াংঝো এবং উহানেও এ ধরনের আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। এ সময় সবাই ‘কোভিড পরীক্ষাকে না বলুন। স্বাধীনতাকে হ্যাঁ বলুন’ বলেও স্লোগান দিতে থাকে।
রোববার জিনজিয়াং কর্মকর্তারা জানান, উরুমকিতে সোমবার থেকে গণপরিবহণ চালু করে দেওয়া হবে। শহরটিতে ৪০ লাখ বাসিন্দা এখনো লকডাউনের আওতায় রয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
৪.৮ মিলিয়ন লোকের একটি শহর উরুমকি। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, ছোট এই শহর করোনা ভাইরাসের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই এখানকার বাজার, সব ধরনের ব্যবসা, যানবাহন পুনরায় চালু করে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এলাকাগুলোতে বাজার এবং অন্যান্য ব্যবসা পুনরায় চালু করার এবং বাস পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ট্রেন এবং এয়ারলাইন পরিষেবা, রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।