চিকিৎসাহীন মৃত্যুর মিছিল এ পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরি
প্রকাশিত : ১০:০১ পূর্বাহ্ণ, ২৮ জুন ২০২০ রবিবার ২০২ বার পঠিত
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ নেই, তারপরও হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের রোগীদের ক্ষেত্রেই ঘটছে এমন দুঃখজনক ঘটনা।
মঙ্গলবার টমটমের ধাক্কায় আহত এক শিশুর ক্ষেত্রেও ঘটেছে এমন ঘটনা। টমটমের আঘাতে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার পাঁচ বছরের শিশুটিকে নিয়ে অন্তত তিনটি হাসপাতালে ঘুরেছেন তার বাবা-মা। কিন্তু কোনো হাসপাতালই ভর্তি নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত সুদূর পতেঙ্গা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ডাক্তাররা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে তিনটি হাসপাতালে ঘুরেছেন তারা, তার যে কোনো একটিতে ভর্তি করা গেলে এবং নাকের রক্ত পড়া বন্ধ হলে শিশুটির বাঁচার সম্ভাবনা ছিল। কোনো ধরনের করোনা উপসর্গ না থাকার পরও কেন রোগী ভর্তি করা হবে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
৫০ শয্যার সব হাসপাতালকে কোভিড, নন-কোভিডে ভাগ করে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ আদালতের। আদালতের নির্দেশনার কথা বাদ দিলেও হাসপাতালের কাজই তো চিকিৎসা দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষার চেষ্টা করা।
কিন্তু আমরা কোন দিকে যাচ্ছি! শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে ও উপসর্গহীন বহু মানুষ একের পর এক হাসপাতালে ঘুরে ভর্তি ও চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন।
বর্তমান সময়ে এসেও মানুষের এভাবে চিকিৎসাহীন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের ঘটনায় সরকার হাসপাতাল-ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হবে।
আমরা মনে করি, করোনাভাইরাসের উপসর্গ বা যে কোনো রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসার পর রোগীকে ভর্তি না করা চরম অমানবিক। কর্তৃপক্ষের উচিত এদিকে গভীর দৃষ্টি দেয়া। প্রয়োজনে চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য হেল্পলাইন খুলে এবং নিয়মিত মোবাইল কোর্টের অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে।
সরকার বেসরকারি হাসপাতালে করোনার মতো সামান্য একটি পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে রোগটির সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায়। তারপরও নমুনা পরীক্ষা করাতে মানুষকে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।
এ ছাড়া কঠিন এ মুহূর্তে অন্য যে কোনো রোগের রোগীদের নিয়ে বড় ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনদের। উদ্বেগের বিষয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের নিয়মিত রোগীদেরও ভর্তি করছে না, ফেরত পাঠাচ্ছে। এটি সত্য, তাদের সুরক্ষার দরকার আছে; কিন্তু প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কেন রোগীদের দেখা হবে না, সেটাই প্রশ্ন।
উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, সরকার দিয়েছে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি; কিন্তু তারপরও যেহেতু রোগীদের ভর্তি না করে ফেরত পাঠাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতাল, সুতরাং এখন কার্যকর পদক্ষেপে না যাওয়ার বিকল্প নেই। আর একজন রোগীও হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না- এটি নিশ্চিত করা জরুরি।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।