শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চার্জশিট থেকে ৬ জনের অব্যাহতি নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত : ০৭:২১ পূর্বাহ্ণ, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার ১৪৩ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ৩৭ কোটি টাকার সরঞ্জাম ক্রয়ে অনিয়ম ও আত্মসাতের মামলার তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ-কেবল কার্যাদেশ প্রদানের ‘অপরাধে’ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. রেজাউল করিমকে মামলার আসামি করা হয়েছে। কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সরঞ্জাম ক্রয়ে অর্থ বরাদ্দ, ব্যয় মঞ্জুরি প্রদান এবং এবং পেছনের তারিখে স্বাক্ষর দিয়ে সরঞ্জাম গ্রহণ করা, বিল ছাড় করাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বাদ দেওয়া হয়েছে চার্জশিট থেকে। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান নিজে বাদী হয়ে এ মামলায় ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন। তদন্ত শেষে তিনি এজাহারভুক্ত ছয়জনকে বাদ দিয়ে চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আর এই অব্যাহতি প্রদানের কারণে মামলার তদন্ত নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। শুধু তাই নয়, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা একই ব্যক্তি হওয়ায় বিষয়টি নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) মো. সহিদুর রহমান বলেন, ‘মামলার সঠিক তদন্তই আমি করেছি। মূলত হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার এখতিয়ার না থাকার পরও রেজাউল করিম স্যার বিধিবহির্ভূতভাবে টেন্ডার কার্যক্রম গ্রহণ করেন। তিনি আবজালের সঙ্গে মিলে অনিয়ম ও আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন বলে আমি মনে করি। যাদের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি তাদের চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন আছে। বিচারেই অভিযোগ প্রমাণিত হবে।’

মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ রেজাউল করিম সোমবার বলেন, মামলায় তার নামে চার্জশিট দেওয়া হলেও তদন্ত কর্মকর্তা তার কোনো বক্তব্যই নেননি। তিনি পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত করে রহস্যজনক কারণে পরিচালকসহ অনেককে বাদ দিয়েছেন। পেছনের তারিখ দিয়ে মালামাল গ্রহণের বিষয়টিও তদন্তে আনেননি। তাছাড়া মালামাল গ্রহণ ও বিল পাশের সময় তিনি অবসরে ছিলেন। তার হাত দিয়ে কার্যাদেশ প্রদান ছাড়া কিছুই হয়নি। তাই টাকা আত্মসাতের বিষয়টি মিথ্যা। আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার একটি কলেজ ও হাসপাতালকে এগিয়ে নিতেই তিনি টেন্ডার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেন। যা আগের কোনো অধ্যক্ষ করেননি। এই কারণে কোভিডকালীন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের লাখ লাখ মানুষকে সেবা দিয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রেকর্ড সৃষ্টি করে।

এদিকে সরকারের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘সাধারণত দুদক কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার আগে প্রাথমিক তদন্ত করে। ওই তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর কমিশনের অনুমোদন নিয়ে এজাহার দায়ের করা হয়। প্রিলিমিনারি তদন্তে আসামি আবার মূল তদন্তে গিয়ে একই ব্যক্তিকে নির্দোষ বা অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের উদ্রেক করে। তাছাড়া মামলার বাদী বা আইও যদি একই ব্যক্তি হন সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও দৃষ্টিকটু। এজন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে, মামলার বাদী ও আইও যাতে ভিন্ন ব্যক্তি হয়। কিন্তু এ নির্দেশনা অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। উচ্চ আদালতে এ ধরনের মামলা টেকে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কক্সবাজারে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রেজাউল করিম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১১টি প্যাকেজে ৩৭ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ২০০ টাকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সরবরাহের কার্যাদেশ প্রদান করেন তিনি। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী সর্বনিম্ন দরদাতাকেই এই কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। তবে কার্যাদেশ প্রদান করলেও এসব সরঞ্জাম গ্রহণের আগেই চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবসরে চলে যান অধ্যক্ষ রেজাউল।

আলোচ্য, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, পিপিআর লঙ্ঘন, নিম্নমানের যন্ত্রপাতি গ্রহণসহ বিভিন্ন অভিযোগে ওই টেন্ডার ও বিল পাশের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান। ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল কক্সবাজার সদর থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. মো. রেজাউল করিম ছাড়াও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুবিনা খানম, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সুবাস চন্দ্র সাহা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন, কক্সবাজার জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুকোমল বড়ুয়া, একই অফিসের এসএস সুপার সুরজিত রায় দাশ, অডিটর পংকজ কুমার বৈদ্য, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের হিসাবরক্ষক হুররম আক্তার খুকি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান সহকারী খায়রুল আলম। মামলার এজাহারে বলা হয়, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের চাহিদা ও প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার অনুপযোগী নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের এই টাকা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন।

সূত্র জানায়, এই অভিযোগ তথা মামলা তদন্তের দায়িত্বও পান মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা মো. সহিদুর রহমান। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিনি ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে কেবল অধ্যক্ষ রেজাউল করিম, ডা. সুবাস চন্দ্র সাহা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক রুবিনা খানম ও তার স্বামী আবজাল হোসেনকে অভিযুক্ত করা হয়। বাকি ছয় আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সূত্র আরও জানায়, অধ্যক্ষ রেজাউল করিম সরঞ্জাম ক্রয়ের সর্বশেষ কার্যাদেশ দিয়েছিলেন ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। এই কার্যাদেশের মেয়াদ ছিল ৭০ দিন অর্থাৎ ৭ মে ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ে সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেনি ঠিকাদার। কার্যাদেশ প্রদানকারী অধ্যক্ষ রেজাউল করিম ২৯ জুন ২০১৭ তারিখে অবসর গ্রহণ করেন। তার স্থলে অধ্যক্ষ ডা. সুবাস চন্দ্র সাহা ২৭ জুলাই ২০১৭ তারিখে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। তিনি আলোচ্য সরঞ্জামসমূহ ২০১৭ সালের আগস্টে গ্রহণ করলেও কাগজে-কলমে গ্রহণ দেখানো হয় পেছনের তারিখ অর্থাৎ মার্চ ও এপ্রিলের বিভিন্ন তারিখে। বিলও পাশ করানো হয় তার সময়ে। মালামাল গ্রহণ ও বিল পাশের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ রেজাউল করিমের স্বাক্ষর কোথাও নেই। কিন্তু মামলার তদন্তে এ বিষয় উঠে আসেনি। সূত্র আরও জানায়, ওই মালামাল সরবরাহে কার্যাদেশের মেয়াদ ৭ মে ২০১৭ তারিখে শেষ হয়ে গেলেও পরিচালক, চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন কীভাবে ২৬ আগস্ট ২০১৭ তারিখ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন, ২৮ আগস্ট ১৭ তারিখে দিয়েছেন ব্যয় মঞ্জুরি। কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা না বাড়িয়েই কীভাবে বরাদ্দ, ব্যয় মঞ্জুরি, প্রশাসনিক অনুমোদন দিলেন পরিচালক-তদন্তে এসব বিষয়ও এড়িয়ে গেছেন আইও।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT