চট্টগ্রামে সরকারি দামে মিলছে না ভোজ্যতেল
প্রকাশিত : ০৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ, ১৯ নভেম্বর ২০২২ শনিবার ৯৩ বার পঠিত
চট্টগ্রামে ফের অস্থির চাল চিনি ও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের বাজার। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও ভোজ্যতেল মিলছে না। একই সঙ্গে লাগামহীনভাবে দাম বাড়ছে চাল ও চিনির। চলছে আমনের ভরা মৌসুম। বাজারে নতুন চাল আসায় দাম কমার কথা। কিন্তু কমেনি।
মিলপর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি আড়ত ও খুচরা বাজারে চালের মজুত পর্যাপ্ত। থরে বিথরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বস্তা। তবুও কয়েক মাস ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। এতে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে সবকিছুর দাম ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়াও আটা-ময়দা, মুরগি ও গরুর মাংস এবং ডিমের দাম আরেক দফা বেড়েছে। এসব পণ্য কিনতে সব শ্রেণির ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চট্টগ্রামে গত সপ্তাহে প্রতি বস্তা মোটা সিদ্ধ চালের দাম ছিল দুই হাজার টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৩০০ টাকা। সিদ্ধ মিনিকেটের দাম আগে ছিল দুই হাজার ৬০০ টাকা। এ সপ্তাহে তা দুই হাজার ৯০০ টাকা। গুটি স্বর্ণার দাম ছিল দুই হাজার ২০০ টাকা, এখন দুই হাজার ৪০০ টাকা। ইন্ডিয়ার স্বর্ণার দাম দুই হাজার ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৫৫০ টাকায় উঠে গেছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে পারি সিদ্ধ জাতের চালের দাম দুই হাজার ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৫০ টাকায়। এ ছাড়া খুচরা বাজারেও অস্থির চালের বাজার। মোটা চাল কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, সরকার বিদেশ থেকে জি-টু-জি’র মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করলেও চালের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার কিছু কিছু মিলার সামনে আরও দাম বাড়বে এমন আশায় চাল মজুত করছে। ফলে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
মিল মালিকরা চালের সরবরাহ একেবারে কমিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রামের চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে চালের আড়তের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর কাছেও বিপুল পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। উত্তরবঙ্গের মিলারদের যোগসাজশে তারাও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না।
ভোজ্যতেলের বাজার গত দুই সপ্তাহ থেকে অস্থির। ভোজ্যতেল আর চিনির দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার থেকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৯০ টাকা। প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনি ১৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১০৮ টাকা।
নতুন দাম অনুযায়ী, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ টাকায় বিক্রি হবে, যা এতদিন ছিল ১৭৮ টাকা। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮৮০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯২৫ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ লিটারের বোতলে বেড়েছে ৪৫ টাকা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৭২ টাকা। এতদিন খোলা সয়াবিনের লিটার বিক্রি হয়েছে ১৫৮ টাকায়।
এছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হবে ১২১ টাকায়। কিন্তু এ দামে কেউ ভোজ্যতেল বিক্রি করছেন না। নগরীর বিভিন্ন মুদি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ২০৫ টাকা দরে। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৯৩০ টাকা থেকে ৯৪০ টাকা দরে।
অন্যদিকে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৮ টাকা। এতদিন ছিল ৯৫ টাকা। নতুন দর অনুযায়ী প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম পড়বে ১০২ টাকা। কিন্তু এ দামে কেউ চিনি বিক্রি করতে রাজি নন।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চিনির সংকট চলছে। এরপর যুক্ত হয়েছে আটার ঘাটতি। এক সপ্তাহ ধরে বাজারে ভোজ্যতেল নিয়ে লুকোচুরি। কোম্পানিগুলোর ডিলাররা চাহিদাপত্র নিয়েও পণ্য দিতে করছেন গড়িমসি। কোনো কোনো ডিলার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করায় দিচ্ছেন না ক্রয় রসিদ। এ কারণে খুচরা পর্যায়েও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার বৃহস্পতিবার ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। তার পরও অস্থির এসব পণ্যের দাম।
খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, আমনের ভর মৌসুম হলেও চালের বাজার অস্থির। মিলাররা চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ করছেন না। আবার কিছু কিছু মিলার ও আড়তদার চালের মজুত করছেন। এসব কারণেই মূলত চালের দাম বাড়ছে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।