খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, সড়কে শতাধিক পরিবারের আশ্রয়
প্রকাশিত : ০৮:১৮ পূর্বাহ্ণ, ২০ জুন ২০২২ সোমবার ৮০ বার পঠিত
আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছানোর মতো কোনো নৌযান না পাওয়ায় গবাদি পশু ও পরিবার পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে সড়কের উপর আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক শতাধিক পরিবারের মানুষজন। রোববার বিকালে সরজমিন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের পাতাঁরগাঁও থেকে বাদাঘাটগামী সড়কের উপর আশ্রীতদের এমন চিত্রই দেখা গেছে।
সরজমিনে সড়কের উপর থাকা আশ্রয় নেওয়া লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, গেল ১৬ জুন বৃহস্পতিবার রাতে হাওড়, নদী ও হাওড়ের পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছানোর মতো নৌযান সুবিধা না পেয়ে বন্যার পানিতে যোগাযোগ যাতায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের পাতারগাঁও-বাদাঘাটগামী সড়কের প্রায় দুই কিলোামিটার সড়ক পথের উপর ত্রিপাল টানিয়ে গবাদী পশু সঙ্গে নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ আশ্রয় নিয়েছেন আশেপাশের গ্রামের কয়েক শতাধিক পরিবারের মানুষজন।
উপজেলার বাদাঘাটের ইসলামপর কালিপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ জানান, সড়কে আশ্রয় নেওয় পরিবারগুলো বন্যার পানির প্রকোপে বসত-বাড়িতে টিকতে না পেরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর থেকেই সড়কের উপর আশ্রয় নিয়েছেন।
আশ্রিতদের মধ্যে অনেকেই সড়কের পাশে থাকা নিকটাত্বীয়দের বাড়িতে, বারান্দায় রাত কাঠানোর ঠাঁই করে নিলেও গবাদি পশু (গরু, ছাগল) সড়কের উপর ত্রিপাল (প্লাষ্টিকের চট) টাঙিয়ে ঝড় বৃষ্টির কবল থেকে রক্ষা করে যাচ্ছেন।
উপজেলার ইসলামপুরের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, সড়কর উপর ও আত্মীয় স্বজনের বসত-বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। পরিবারেরগুলোর মধ্যে শুকনো খাাবার, শিশু খাদ্য, মোমবাতি, বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যার পর থেকে এসব পরিবারগুলোর মধ্যে সরকার-বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কোনো রকম ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো হয়নি।
ডুবে গেছে সব সড়ক: তাহিরপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে সাত ইউনিয়নের সবকটি কাঁচা পাকা সড়ক পথ ডুবে গেছে।
হাট বাজারে কোমড় পানি: তাহিরপুর উপজেলার সদরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট ব্যতিত ছোট বড় ১৮টি গ্রামীণ হাট বাজারে রোববার রাত অবধি বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বাদাঘাট ব্যতিত সবকটি গ্রামীণ হাটে কোমড় পানি দেখা গেছে। যে কারণে মানুষ প্রয়োজনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করতে পারছেন না।
গ্যাসসহ শুকনো খাবারের চড়া দাম: উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারের বন্যার পানি না উঠায় বন্যা কবলিত মানুষজনকে কাবু করতে গ্যাস সিলিন্ডার ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভোক্তভোগীরা। শুকনো চিড়া প্রতি কেজি ৯০ টাকা, শুকনো সাদা মুড়ি প্রতি কেজি ৯০ টাকা, মোমবাতি প্রতিটি ৫টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।
উপজেলার বড়দল গ্রামের আবু হানিফ জানান, বস-বাড়িতে বন্যার পানি উঠে যাওয়ায় চুলা জ্বালানো সম্ভব হয়নি শনিবার বাদাঘাট বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে গেলে এক ডিলার এক সিলিন্ডার গ্যাসের দাম আমার কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা রেখেছেন।দাম বৃদ্ধিও কারণ জানতে চাইলে ওই ডিলার সাফ জানিয়ে দেন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয় করা হবে না, গ্যাস সিলিন্ডার নেই।
উপজেলার হাফানিয়া গ্রামের শুক্কুর আলী জানান, বাদাঘাট বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে গেলে এক ডিলার আমার নিকট থেকে এক সিলিন্ডার গ্যাস ২২৫০ টাকা রেখেছেন। মূল্যবৃদ্ধির কথা জানতে চাইলে সোজা গ্যাস বিক্রি করা হবে না বলে জানালে আমি বাধ্য হয়ে ২২৫০ টাকা দিয়েই গ্যাস সিলিন্ডার কিনে নিয়ে আসি।
উপজেলার কামড়াবন্দ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাশিম বলেন, বন্যা শুরুর সঙ্গে বাদাঘাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী ৫ টাকার মোমবাতি ১০ টাকা, প্রতি কেজি শুকনো চিড়া, সাদা মুড়ির দাম ৯০টাকা করে রেখেছেন। তিনি বলেন, চিড়া, মুড়ি, মোমবাতির চড়া দাম আদায় করে এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী বন্যা কবলিত মানুষজনের মানবিক বিপর্য়য়ের সময়কাল আরও বিষিয়ে তুলেছেন।
রোববার রাতে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রায়হান কবির জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রান্না করা, শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এমন মানবিক বিপর্যয়ে তিনি সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর পাশে মানবিক সহায়তার আহ্বান জানান।
বন্যাকে পুঁজি করে গ্যাস সিলিন্ডার, চিড়া, মুড়ি, মোমবাতসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর হঠাৎ চড়া মূল্য আদায়কারীদের ব্যাপারে তালিকা প্রণয়ন করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।