বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলকাতায় বিমানের ফ্লাইটে ত্রুটি, যাত্রীদের দুর্ভোগ

প্রকাশিত : ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ২০ জুলাই ২০২২ বুধবার ১১৬ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

কলকাতায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভোগান্তি হলেও চার ঘণ্টা বিলম্বে নিরাপদেই ঢাকায় ফিরেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি। ঢাকায় আসার পর বিমানের নিজস্ব হ্যাঙ্গারে গিয়ারের সামান্য ত্রুটি সেরে সেটা আবার মঙ্গলবার বিকেলেই চট্টগ্রাম গেছে। তবে এতে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তির জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ কলকাতা বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছে। বিমানের মতে- কলকাতায় ওই ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর সময় যদি যাত্রীদের অফলোড করে এয়ারপোর্টে এনে রাখার সুযোগ দিত- তাহলে তাদের এত দুর্দশা ও ভোগান্তি দেখা দিত না।

এ বিষয়ে বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানিয়েছেন, আসলে এখানে বিমানের কিছুই করার ছিল না। যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল অনাকাক্সিক্ষত ও আকস্মিক। এ ধরনের ত্রুটি যে কোন সময় দেখা দিতে পারে। মূলত ল্যান্ডিং গিয়ারের সামান্য ত্রুটির জন্য ককপিটে রেড সিগন্যাল আসায় পাইলট সেটা মেরামত করতে সময় দুই দফা গিয়ে নেয়ায় ঘণ্টা চারেক সময় অতিরিক্ত লেগেছে। এ সময়টুকু যাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে।

বিমান জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে কলকাতা থেকে বিমানের ফ্লাইটটির ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। তবে ফ্লাইট ছাড়ার আগ মুহূর্তে কারিগরি ত্রুটির কথা জানানো হয় এবং বিলম্বে ছাড়বে বলা হয়। ঘণ্টাখানেক পর প্রথম দফা যান্ত্রিক ত্রুটি সেরে ফ্লাইটটি আবারও ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তবে রানওয়েতে গিয়ে ফ্লাইটটি আবারও কারিগরি ত্রুটির কথা বলে উড্ডয়ন বাতিল করে বোর্ডিংয়ের কাছে ফিরে আসে। ফ্লাইটটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিলেন। এ সময় তাদের মধ্যে প্রচ- গরমে একজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

বিমান জানিয়েছে, সাধারণত এ ধরনের ত্রুটি মেরামত করার সময় ফ্লাইটের পাওয়ার অফ করে দিতে হয়। এ কারণে উড়োজাহাজের ভেতরে থাকা যাত্রীরা এসির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় প্রচ- গরমের শিকার হন। যদিও বিমানের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বে¡ও কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের বাইরে বের হয়ে আসার অনুমতি দেয়নি। ফলে যাত্রীদের বাধ্য হয়েই ওই ফ্লাইটের ভেতরে বসে থাকতে হয়। এ সময় কি ধরনের ভোগান্তি হতে হয়েছে সে সম্পর্কে ক’জন যাত্রী জানান- অনেকের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তার পরও তাদের নামতে দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে যাত্রী শওকত হোসেন জানান, গ্রাউন্ড ইলেক্ট্রিসিটি না থাকায় এসি চলেনি, তাদের নামতে দেয়া হয়নি না। কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার জানান, ফ্লাইটটি কারিগরি ত্রুটির কারণে ঠিক সময়ে ছাড়তে পারেনি। একজন অসুস্থ হন বলে আমরা জানতে পারি। সংবাদ পেয়ে প্লেনের সামনে চিকিৎসক ও এ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক ঢুকে ওই রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। শেষ পর্যন্ত সোমবার মধ্যরাত ১টা ৪১ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি।

এদিকে দীর্ঘ চার ঘণ্টা ফ্লাইটে আটকে পড়া যাত্রীরা ফেসবুকে তাদের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। উল্কা হোসেন নামে এক যাত্রী তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, কলকাতা থেকে দেশে আসার উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশের প্লেনে ওঠার পাঁচ মিনিটের মাথায় ক্যাপ্টেন বললেন যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বিলম্ব হবে! ওই অবস্থায় এসি কাজ করছিল না।

লাইট অফ হয়ে যাচ্ছিল বারবার। গরমে আধমরা অবস্থা আমাদের সবার। এভাবে আমরা চার ঘণ্টা আটকে ছিলাম। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার তিনবার এসে ঠিকঠাক করে দেয়ার পর ক্যাপ্টেন অতি দক্ষতার সঙ্গে বিমানের ১৮০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা অবতরণ করলেন।

যান্ত্রিক ত্রুটি বলতে বিমানের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটিতে কী হয়েছিল তা জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন- উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের আগ মুহূর্তে পেছনে ল্যান্ডিং গিয়ারে ইন্ডিকেটরে ত্রুটি দেখা দেয়। তখন উড়োজাহাজটি রানওয়ের কাছে রেখে ত্রুটি খুঁজতে থাকেন কলকাতা বিমানবন্দরের প্রকৌশলীরা। এ কাজের জন্য বিমানের এসিসহ অন্যান্য ইঞ্জিন বন্ধ রাখা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর ত্রুটি কাটিয়ে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নেয় উড়োজাহাজটি। সেই মুহূর্তে আবার একই ত্রুটি ধরা পড়ে এয়ারলাইন্সটির। কিন্তু এ ত্রুটি ঠিক করতে কত সময় লাগবে, তা বলতে পারেননি প্রকৌশলীরা। এতে গরমে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কোন উড়োজাহাজ বিমানববন্দর থেকে বের হলে রানওয়ে যাত্রী নামানো বা ওঠানোর সুযোগ নেই। আইনে এমনটাই বলা আছে। আর প্রকৌশলীরাও ঠিকমতো বলতে পারছিলেন না ত্রুটি সারতে ঠিক কত সময় লাগবে।

এ সম্পর্কে বিমানের প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা জানান, কলকাতায় বিমানের প্রকৌশল সহযোগিতা দিয়ে থাকে এয়ার ইন্ডিয়ার স্টাফরা। এখানেও তারা এসেছিল। কিন্তু তারা বিষয়টি ধরতে পারেনি। যে কারণে ওই ত্রুটি রেখেই ঢাকায় নিয়ে আসা হয় ফ্লাইটটি। কারণ এটা তেমন কোন বড় ত্রুটি ছিল না। ল্যান্ডিং গিয়ারে একটি কেবল ইন্টারমিট হওয়ায় ককপিটে রেড সিগনাল যাচ্ছিল। ঢাকায় আসার পর মাত্র আধা ঘণ্টায় সেই ত্রুটি সেরে মঙ্গলবার বিকেলেই সেটা চট্টগ্রাম চলে গেছে যাত্রী নিয়ে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT