করোনা ঝুঁকিতে ব্যাংক কর্মকর্তা এবং গ্রাহক
প্রকাশিত : ০১:৪৩ অপরাহ্ণ, ৯ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার ১৮৬ বার পঠিত
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতেও খোলা রাখা হয়েছে ব্যাংক। গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনায় সীমিত আকারে ব্যাংক লেনদেন চালু রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সীমিত সময়ের ব্যাংক লেনদেনে টাকা তুলতে ব্যাংকে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ।
ফলে গ্রাহকদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এতে সামাজিক দূরত্বও বজায় থাকছে না। ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। এরই মধ্যে গতকাল এক ব্যাংক কর্মকর্তা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে।
তারা বলেন, কম সময়ের লেনদেনে গ্রাহকদের এত চাপ যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। এতে ব্যাংকারদের পাশাপাশি যারা ব্যাংকে আসছে, সবাই ঝুঁকিতে রয়েছে। এ জন্য সবার নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, দেশে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এই ছুটির মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুমান করে এই ছুটি ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, গতকাল বুধবার রাজধানী মতিঝিলে অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার এক কর্মকর্তা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর ফলে ওই শাখাটি লকডাউন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার এক কর্মকর্তার জ্বর ছিল। পরে পরীক্ষা করার পর করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। তাই শাখাটি লকডাউন করা হয়েছে এবং ওই শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, করোনা প্রতিরোধে সঠিক নিয়মকানুন পরিপালন করতে কঠোর সতর্ক বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি দর্শনার্থী বা সাক্ষাৎ প্রার্থীদের ব্যাংকে আগমন নিরুৎসাহিতের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবৃদ্ধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু অনেক গ্রাহক ব্যাংকে লেনদেনের সময় এ নিয়ম অনুসরণ করছে না। তাই ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যতীত দর্শনার্থী বা সাক্ষাৎ প্রার্থীদের ব্যাংকে আগমন নিরুৎসাহিত করতে হবে। ব্যাংকে উপস্থিত সবার মধ্যে যাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব (ডবিউএইচও এর গাইডলাইন অনুযায়ী) বজায় থাকে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন ব্যাংকে আগত বিভিন্ন ভাতা গ্রহণকারীসহ গ্রাহক, দর্শনার্থী, সাক্ষাৎ প্রার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকে আসার পর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছেন না। তাই পুনরায় নির্দেশনা দেয়া যাচ্ছে যে, ব্যাংকে আগত বিভিন্ন ভাতা গ্রহণকারীসহ গ্রাহক, দর্শনার্থী, সাক্ষাৎপ্রার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকে আসার পর যাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে।
বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার থেকে ব্যাংকগুলোতে লেনদেন হচ্ছে তিন ঘণ্টা। এই সময়ে বেশিরভাগ গ্রাহকই টাকা তুলতে আসছেন। বিশেষ করে মাসের প্রথম দিক হওয়ায় বেতন, স য়পত্রের নগদায়ন ও মুনাফা উত্তোলন এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা তোলার চাপ অনেক বেড়ে গেছে। গতকালও ব্যাংকে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোতে গ্রাহকদের চাপ এতটাই বেশি ছিল যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, উল্টো গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াতে দেখা যায় গ্রাহকদের। এতে করোনা ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সাধারণ ছুটির মধ্যেও গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড় বাড়ছে ব্যাংকগুলোতে। বেশিরভাগই নগদ টাকা তুলছেন। রেমিট্যান্স তুলতে আসেন অনেকেই। কেউ কেউ এসেছেন ডিপিএসের টাকা জমা দিতে।
গ্রাহকের এতটাই চাপ ছিল যে লাইনে এক ইি ফাঁকাও ছিল না। গ্রাহকদের সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে আমাদের। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন ব্যাংক বন্ধ রেখে এটিএম বুথগুলোকে আরো বেশি সচল রাখা উচিত। কেননা গ্রাহক ব্যাংকে এসে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এ সময় তারা হাঁচি, কাশিও দিচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা আমাদের চেক বই দিচ্ছেন, আমরা তাদের টাকা দিচ্ছি। আর করোনা তো এভাবেই ছড়ায়। ফলে আমরা নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি।
ব্যাংক খোলা রাখা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাংক কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। তেমনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, এত রিস্কের মধ্যে ব্যাংকিং করা যায়? কেউ বুঝে না তিন ফুট দূরত্বে দাঁড়ানোর কথা, হাত ধোয়া না, ইচ্ছামতো হাঁচি কাশি দেয়। সীমিত ব্যাংকিং অথচ কাস্টমার সরগরম, লোকবল সঙ্কট, নানাবিধ অপ্রতুলতা। বেঁচে থাকলে তো ভালো।
প্রতিদিন শত শত মানুষ থেকে কতজন আক্রান্ত হবে তার ঠিক আছে? যতই পেপারলেস ব্যাংকিং বলি সিকিউরিটি, ইনসিউরিটির জন্য ব্যাংক প্রয়োজন। এই সার্ভিসের স্বীকৃতি কেউ চায় না। ন্যূনতম ধন্যবাদটুকু অর্জিত হোক। ব্যাংকে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়ের কিছু স্থিরচিত্র আপলোড করে অপর এক ব্যাংক কর্মকর্তা তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ব্যাংক বন্ধ হলে অর্থনীতিতে ধকল যাবে। আর ব্যাংকার মরলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।