রবিবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কয়েক হাজার চিকিৎসক হয়েছেন ১৬ বছরে

প্রকাশিত : ০৯:২৮ পূর্বাহ্ণ, ১৪ আগস্ট ২০২৩ সোমবার ২৫ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

বছরের পর বছর ফাঁস হয়েছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন। সিআইডির পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ১৬ বছরে ১০ বার ফাঁস হয়েছে এই প্রশ্নপত্র। বছরভেদে ১০-২০ লাখ টাকার বিনিময়ে একজন পরীক্ষার্থীকে এসব প্রশ্ন দেওয়া হতো। এভাবে অন্তত ৪ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যাদের বড় অংশ ইতোমধ্যে পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হয়েছেন। কোচিং সেন্টারের আড়ালে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই অপকর্মে জড়িয়েছেন। এভাবে তারা হাতিয়ে নিয়েছেন শতকোটি টাকা। এখন পর্যন্ত এই চক্রের মোট ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সর্বশেষ রোববার সাতজন চিকিৎসকসহ চক্রটির ১২ সদস্যকে গ্রেফতারের খবর জানিয়েছে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে তিন চিকিৎসককে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা হলেন- ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০), ডা. সোহেলী জামান (৪০), ডা. মো. আবু রায়হান, ডা. জেডএম সালেহীন শোভন (৪৮), ডা. মো. জোবাইদুর রহমান জনি (৩৮), ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭), ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২), জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮), রওশন আলী হিমু (৪৫), আক্তারুজ্জামান তুষার (৪৩), জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী (৪৫) ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩)। গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল জেলায় অভিযান চালিয়ে তিন ধাপে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সিআইডির সাইবার টিমের এই অভিযানে গ্রেফতারকৃত ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই চিকিৎসক। সোহেলী এবং রনি সরকারি চিকিৎসক। রয়েছেন প্রশ্নফাঁসকারীদের নিকটাত্মীয় ও চিকিৎসক দম্পতিও। গ্রেফতার ১২ জনের মধ্যে দম্পতি ডা. ময়েজ ও ডা. সোহেলী এবং ডা. জনি ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার আদলতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এদের প্রথম তিনজন বর্তমানে সিআইডি হেফাজতে রিমান্ডে আছেন। কারাগারে আছেন কুদ্দুস সরকার। গ্রেফতারকৃতদের প্রায় সবাই ৬টি মেডিকেল ভর্তি কোচিং অথবা প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্ন ফাঁস করতেন।

রোববার মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৮ জন তাদের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে, যারা প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। ইতোমেধ্যে অনেকে পাশ করে চিকিৎসকও হয়েছেন। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।

সিআইডি প্রধান আরও বলেন, অন্যান্য প্রশ্নফাঁসের তদন্ত করতে গিয়ে দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্নফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় ২০২০ সালের ২০ জুলাই মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করে দেখা যায়, চক্রের অন্তত ৮০ সক্রিয় সদস্য বিগত প্রায় ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়েছে। এভাবে তারা শতকোটি টাকার মালিক হয়েছে। এদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো ২০২১ সালে দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়। যেখানে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের ১৫-২০ জন চিকিৎসকসহ অন্তত ৬০ জনের নাম রয়েছে। তাদের সদস্যদের ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত ১২ জনের থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, ৪টি ল্যাপটপ, নগদ ২ লাখ ১১ হাজার টাকা, ১৫ হাজার ১০০ থাই বাথ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ১৫টি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং ভর্তির এডমিট কার্ড উদ্ধার হয়। এগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তে উঠে এসেছে, ২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্র মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস করেছে। এর মধ্যে ২০০৬ এবং ২০১৭ সালে প্রশ্নফাঁস করে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে।

সিআইডির তদন্ত সূত্রগুলো বলছে, মূলত কোচিং ব্যবসাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে প্রশ্নফাঁসকারীরা। সিআইডির অনুসন্ধানে প্রশ্নফাঁসে ছয়টি কোচিং সেন্টারের সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে। সেগুলো হলো-ফেইম, প্রাইমেট, থ্রি-ডক্টরস, মেডিকো, ইউনিভার্সেল এবং ই-হক। সিআইডি জানিয়েছে, এর মধ্যে মেডিকোকে এখনো তারা সন্দেহের আওতায় রেখেছে। এই কোচিং সেন্টারটির সারা দেশের ১৮টি ব্রাঞ্চে ৮-১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৬০০ তাদের কোচিং থেকে ভর্তি হয়। এ বিষয়গুলোও তারা নজরদারিতে রেখেছেন।

সিআইডি আরও জানিয়েছে, প্রশ্নফাঁসের এই চক্রটির বড় অংশ মূলত পারিবারিক সিন্ডিকেট। প্রশ্নফাঁস করে বিপুল পরিমাণে সম্পদের মালিক হয়ে পরে এরা নিকটাত্মীয়দেরও এই কাজে সম্পৃক্ত করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চারজনকে র‌্যাব ইতোপূর্বে ২০১৫ সালে গ্রেফতার করেছিল।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।



© ২০২৩ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT