বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক ঘণ্টার স্থলে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং কথা রাখেনি বিদ্যুত বিভাগ

প্রকাশিত : ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ, ২০ জুলাই ২০২২ বুধবার ১২৫ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

বিদ্যুত ও জ্বালানি সাশ্রয়ে দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার কথা ছিল। তাও পিক আওয়ারে অর্থাৎ বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে। কিন্তু রাজধানীসহ সারাদেশেই দিনভর লোডশেডিংয়ের কবলে নাজেহাল হতে হয়েছে সাধারণ মানুষজনকে। বেশিরভাগ জায়গাই দফায় দফায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুতহীন ছিল।

বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের বাজারের অস্থিরতার কারণে স্পট মার্কেট থেকে উচ্চ মূল্যে কেনা বন্ধ রাখায় জ্বালানি সঙ্কটে বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হচ্ছে বিদ্যুত উৎপাদন। এমন অবস্থায় প্রথমে বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ে দাম বাড়ানোর চিন্তা করা হলেও ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সঙ্কট কাটাতে প্রতিদিন এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংসহ নেয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সিদ্ধান্ত। সোমবার সাম্প্রতিক জ্বালানি তেলের সঙ্কটে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবেলায় এক জরুরী বৈঠক করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সভায় জানানো হয়, মঙ্গলবার থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ে যাচ্ছে দেশ। সরকারী-বেসরকারী অফিস ভার্চুয়ালি করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। ওই বৈঠকে দেশজুড়ে প্রতিদিন এলাকাভিত্তিক ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুধু তাই নয় পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ডিজেলচালিত বিদ্যুতকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সপ্তাহে একদিন বন্ধ রাখা হবে পেট্রোল পাম্পও। রাত আটটার পর দোকানপাট, শপিংমল বন্ধ না করলে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন করা হবে। সরকারী অফিস আদালতের সভা-সেমিনার আবারও অনলাইনে করার চিন্তা-ভাবনাসহ অফিস সময় ১ থেকে ২ ঘণ্টা কমিয়ে আনার কথাও বলা হয়। শুধু তাই নয় মসজিদ-মন্দিরসহ সব ধরনের উপাসনালয়ে অপ্রয়োজনে এসির ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেই দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার লোডশেডিং হয়েছে। এক ঘণ্টার বদলে ঘড়ির কাঁটায় সময় পৌঁছেছে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। রাজধানীর বাংলামোটর, মগবাজার, ধানম-ি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ প্রায় সব জায়গায়ই দিনে তিন থেকে চারবার বিদ্যুত যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীর বাংলামোটরের নিউ ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা এলি রহমান অভিযোগ করে বলেন, সরকার তো কইছে বিদ্যুত যাইব এক ঘণ্টা। কিন্তু এ কি সকাল ১০টায় গেল একবার, দুপুর দুইটার দিকে গেল আরেকবার, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গেল একবার। এমন হইলে ক্যামনে চলবে? এমনিতেই গরম তার ওপর এত লোডশেডিংয়ে থাকা সম্ভব?

একই অভিযোগ করেন মগবাজারের নয়াটোলা এলাকার বাসিন্দা হৃদম রহমান। তিনি বলেন, ভরদুপুরে তীব্র গরমে যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখনই লোডশেডিং। প্রায় এক ঘণ্টা বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন। এক ঘণ্টা পর আসলেও আবার শেষ বিকেলে আধা ঘণ্টা যাবত লোডশেডিং। সাশ্রয়ের নামে যদি সাধারণ মানুষের ভোগান্তিই হয় তাহলে কিভাবে সম্ভব?

এদিকে উপাসনালয় বিশেষ করে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডায় প্রার্থনার সময় ছাড়া এসি বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। যা নিয়ে একটি গুজব তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। অনেকেই বলছেন, সরকার বিদ্যুত সাশ্রয়ের নামে মসজিদে এসি বন্ধ রাখার কথা বলেছে। যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শামিল। বিষয়টি একেবারেই ভুল তথ্য উল্লেখ করে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা কোথাও বলিনি মসজিদে এসি বন্ধ রাখতে হবে। আমরা বলেছি যেে কোন উপাসনালয়ে প্রার্থনার সময় ছাড়া এসি বন্ধ রাখতে। এতে করে অনেকটা বিদ্যুত সাশ্রয় হবে। তবে সরেজমিন রাজধানীর কোন এলাকায়ই এই নির্দেশনার কোন বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। কয়েকটি মসজিদে মুসল্লিরা এসি চালিয়েই নামাজের সময় ছাড়াও বিশ্রাম নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে কোন মনিটরিং থাকবে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আসলে সবার সদিচ্ছা না থাকলে এ সঙ্কট আমাদের একার পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব না। যেহেতু এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা তাই কিছুটা কষ্ট তো আমাদের মেনে নিতেই হবে।

তবে দোকানপাট সময়মতো অর্থাৎ সন্ধ্যা আটটার মধ্যে বন্ধ করতে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলো। সোমবার রাতে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)-এর একটি টিম রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, পল্টন, ফকিরাপুলসহ বেশকিছু এলাকায় অভিযান চালায়। তারা প্রথমে মাইকে লাইট বন্ধ করার অনুরোধ করেন। এর পরও যারা বন্ধ করেনি তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ডিপিডিসি।

এ অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, আমরা প্রত্যেক জোনকে জানিয়েছি রাত ৮টার পর গাড়ি নিয়ে টহল দিতে। প্রথমে অনুরোধ করা হবে, না মানলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT