অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না ইব্রাহিমের
প্রকাশিত : ১০:৪২ অপরাহ্ণ, ৬ জুন ২০২২ সোমবার ১৩৬ বার পঠিত
ইব্রাহিমের স্ত্রী মুন্নী নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগামী ২৮ জুলাই সন্তান ভূমিষ্ঠের সম্ভাব্য দিন। শনিবার রাত ৯টায় মুন্নীসহ তার মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়। কোরবানির ঈদে বাড়ি এসে সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিল। একইসঙ্গে সন্তান ও মুন্নীরে চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ছেলে হলে মাদ্রাসায় পড়াতে চেয়েছিল, হাফেজ বানাতে চেয়েছিল। আমার বোন-জামাইয়ের সেই আশা আর পূরণ হলো না।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও করতে করতে মারা যাওয়া ইব্রাহিমের স্ত্রী মুন্নীর বড়বোন রেহেনা খাতুন এসব কথা বলেন।
সোমবার ভোরে বাড়িতে পৌঁছায় ইব্রাহিমের মরদেহ। তখন বাড়িতে চলছিল শোকের মাতম। শোককে সঙ্গী করে নরসিংহপুর গ্রামের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিদায় দেন পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে নির্মমভাবে প্রাণ বিসর্জন দেয়া হতভাগ্য ইব্রাহিমকে।
সোমবার সকাল ১০টায় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় আশপাশের গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত ইব্রাহিম আরএফএল কোম্পানিতে ওই এলাকায় শিপিং সহকারী পদে চাকরি করতেন। তিনি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামের আবুল কাশেম মুন্সীর ছোট ছেলে।
নিহত ইব্রাহীম হোসেনের মেজো বোন সেলিনা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই ভিডিও করতিছিল। ভিডিও করতি করতি কী ছুইটে আইসে আমার ভাইয়ের মাথায় লাইগলো রে…। মা কয়ে চিল্লেন দিয়ে আর কথা কইনি রে…। আমার ভাই কী কইরে ফুরোয়ে গেলো রে..। ভাইতো আর আসবে নারে…।’
বারবার মূর্ছা যেতে যেতে ইব্রাহিমের মা দুলাপি বেগম বলেন, ওরে আল্লাহ রে…আমি কি করবো। তুমি আমার কি পরীক্ষা করতিছাও। তুমি আমার সন্তানরে ফেরায়ে এনে দাও আল্লাহ রে…। সে খুব আদরের। আমি কার নিয়ে বাঁচবো। ওর ঘরে যে পোয়াতি (অন্তঃসত্ত্বা) বউ রয়েছে। প্রথম বাপ হবে আমার ইব্রাহিম। সন্তানের মুখ দেখতে পেল না আল্লাহ রে…। আমি কি করবো। ওর জায়গায় তুমি আমারে নিতে পারলে না কেন!
পাশেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে বাবা অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আবুল কাশেম।
আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবরে গত দুই দিন ধরে প্রতিবেশী ও আশেপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন। জীবন সঙ্গীকে হারিয়ে স্ত্রী মুন্নি খাতুন যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। ভাই-বোনসহ অন্যান্য স্বজনদের ক্ষণে ক্ষণে গগনবিদারী আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে উঠেছে। বাড়ির ভিতরের বারান্দায় প্রতিবেশী মহিলারা নিহত ইব্রাহিমের নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুন্নী খাতুনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। বলছেন এ সময় তুমি ভেঙে পড়লে তোমার পেটের সন্তানের সমস্যা হবে।
বারবার মূর্ছা যেতে যেতে মুন্নী খাতুন বলছেন, আমার এই জীবন রেখে কী লাভ। আমার পাখি চলে গেছে। ও আল্লাহ আমারেও নিয়ে যাও। আমার পাখিরে রেখে কীভাবে বাঁচবো। আমাদের সন্তানরে নিয়ে ওর কত স্বপ্ন ছিল। এখন কী হবে!
ইব্রাহিম একটি কোম্পানির এক্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের শিপিং সহকারী পদে চাকরি করতেন। একই প্রতিষ্ঠানের অন্য শাখায় কাজ করেন তার খালাতো ভাই নাজমুল হোসেন।
তিনি বলেন, শনিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ইব্রাহিম আগুনে দগ্ধ হয়। তার আগে সে বাড়িতে মা, বাবা ও স্ত্রীসহ অন্য স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে। তার মাথার পেছনে ও পেটে আঘাত ও আগুন লাগে। মুখ, টি-শার্ট ও মোবাইল ফোন দেখে তাকে শনাক্ত করি। উদ্ধারের সময় তার ফোনটি সচল ছিল।
আরেক খালাতো ভাই শিমুল হোসেন বলেন, শনিবার রাতে অনেকের মতো ইব্রাহিমও অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। কিছু সময় পর হঠাৎ ডিপোর কনটেইনারগুলোতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে লাশ পাওয়া যায়। দেড় বছর আগে নিজ গ্রামেই বিয়ে করে সে। তার এমন মৃত্যুতে তার অনাগত এ সন্তানের কী হবে সেটাই ভাবছি আমরা। আল্লাহ যেন আর কারো এমন মৃত্যু না দেন।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।