মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাজার কোটি টাকার সম্পদ করেছেন চট্টগ্রামের জসীম

প্রকাশিত : ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ, ১৯ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার ২৮ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

চট্টগ্রামের চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন আহমেদের বিপুল সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। একসময় খাবারের দোকানে কাজ করা এ ব্যক্তি কীভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক হলেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তার বিত্তবৈভবের উত্থান ও সম্পদের উৎস ঘিরে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।

আলোচিত ব্যবসায়ী জসীম দুই সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও শহিদুল হকের ব্যবসায়িক পার্টনার। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ বিগত সরকারের ক্ষমতাধরদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। এ সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে তিনি স্বর্ণ চোরাচালান এবং ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে শতকোটি টাকার ঋণ খেলাপি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, স্বর্ণ চোরাচালান ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জসীমের বিরুদ্ধে। একাধিক সূত্র বলছে, জসীম উদ্দিন আহমেদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম আর্থিক জোগানদাতা। চট্টগ্রামের এ বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে অনেকে ‘মাফিয়া’ হিসাবেও চেনেন।

নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ : অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিতর্কিত ব্যবসায়ী জসীম কক্সবাজারের কলাতলী সাগরপাড়ে অবস্থিত তারকামানের হোটেল রামাদার সিংহভাগ মালিক। হোটেলটির পার্টনার সাবেক আইজিপি বেনজীরের মালিকানাও এখন জসীমের দখলে। সব মিলিয়ে এ হোটেলটিতে তার বিনিয়োগ ২৫০ কোটি টাকার বেশি বলে জানা গেছে। কলাতলী বিকাশ বিল্ডিং নামে পরিচিত একটি বহুতল আবাসিক হোটেলের ৭৯টি ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছেন জসীম। একই হোটেলে থাকা আরেক সাবেক আইজিপি, বর্তমানে কারান্তরিন শহিদুল হকের কাছ থেকে ১৩টি ফ্ল্যাটও কিনে নিয়েছেন তিনি। এসব ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য শতকোটি টাকার কাছাকাছি।

চট্টগ্রামের লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে প্রায় শতকোটি টাকা দিয়ে মহল শপিং কমপ্লেক্স কিনেছেন। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক ই-ব্লকের ১৪ নম্বর প্লটে ৮০ শতক জমি রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকা। ফিরিঙ্গি বাজারে ৩টি বহুতল আবাসিক ভবন, যার বাজারমূল্য ৮০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় তিন কানি জমি, যার আনুমানিক বাজারমূল্য দেড়শ কোটি টাকা। বাকলিয়ায় ৫ কানি জমি, আনুমানিক বাজারমূল্য ১৭০ কোটি টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে শতকোটি টাকার জায়গা কিনেছেন বলে জানিয়েছেন জসীমের ঘনিষ্ঠজনরা। চন্দনাইশে নিজ এলাকায় বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। গ্রামে নামে-বেনামে আরও অন্তত শতকোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। দুবাই ও সৌদি আরবে একাধিক হোটেলের মালিকানাসহ বিভিন্ন ব্যবসায় অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে তার। সব মিলিয়ে দেশ-বিদেশে জসীম উদ্দিন হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

দুবাইয়ে যা করতেন জসীম : দুবাই প্রবাসীরা বলছেন, জসীম দেরা দুবাই এলাকায় হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি নিষিদ্ধ জগতের ব্যবসায়ী হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নাইটক্লাবে নাচগানের কথা বলে অনেক মেয়েকে নিয়ে যেতেন। জসীম দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দুবাইয়ে টাকা পাচারেও জড়িত। দুবাই প্রবাসী শরীফ আহমেদ বলেন, জসীম প্রথমে দুবাইয়ে এসে খুব কষ্ট করে সময় পার করেছেন। পরে ফিরুজ মোড়া এলাকা ও গোল্ডেন কাফ এলাকায় ফ্ল্যাটে অনৈতিক ব্যবসা, সোনা চোরাচালান ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অবৈধ হুন্ডির ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক বনে গেছেন।

ইয়াবা মাফিয়া সাইফুলের বন্দুকযুদ্ধে নিহতের নেপথ্যে : অভিযোগ আছে, ২০১৯ সালে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দেশের এক নম্বর ইয়াবা গডফাদার সাইফুল করিমকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায়ও তিনি জড়িত ছিলেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান ও সাবেক আইজিপি বেনজীরের নামে দুবাইয়ে হুন্ডির মাধ্যমে শতকোটি টাকা নিয়েছিলেন জসীম। সাইফুলের দুবাই ব্যবসাও জসীমকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে সাইফুল আত্মসমর্পণের জন্য দেশে ফিরে এলে পুলিশ হেফাজত থেকে তাকে নিয়ে গিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, আর্থিক লেনদেন প্রকাশের ভয় এবং সাইফুলের ব্যবসা আত্মসাৎ করতেই কামাল-বেনজীর ও জসীম মিলে সাইফুলকে বন্দুকযুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। খোদ সাইফুল করিমের ঘনিষ্ঠ সূত্র বিষয়টি স্বীকার করেছে।

রথী-মহারথীদের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাধর জসীম : চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার বলেন, জসীম উদ্দিন সাবেক বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত আইজিপি বেনজীর আহমেদের ব্যবসায়িক পার্টনার। তার কালোটাকার সিংহভাগ দুবাইয়ে পাচার করে জসীমের মাধ্যমে সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বেনজীর। দেশেও বেনজীরের ব্যবসাগুলো এখনো জসীম দেখভাল করছেন। এর আগে আরেক সাবেক আইজিপি শহিদুল হকের সঙ্গে জসিমের ব্যবসা ছিল। তিনি বলেন, জসীমের সঙ্গে ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের অনেক সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাদের ক্ষমতা জসীম এমনভাবে অপব্যবহার করেছেন যে চন্দনাইশে তার পাশে কেউ দাঁড়াতে পারেনি। জসীম এসব আওয়ামী লীগ নেতাকে বিপুল অর্থ সহযোগিতা করেন। অথচ পদ্মা ব্যাংক থেকে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন জসীম। এ কারণে আদালত তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা, গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছিলেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জসীম উদ্দিন নিজেই তার প্রভাব ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা, সাবেক মন্ত্রী এবং সাবেক আইজিপি বেনজীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফেসবুকে প্রচার করতেন। এসব ছবি তার অফিস ও বাড়িতেও টাঙিয়ে রেখেছেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের নাম বলে হুমকি দিয়েছেন। তবে ৫ আগস্টের সরকার পতনের পর এখন সেই জসীম উদ্দিনই আওয়ামী লীগ সরকারকে স্বৈরাচার বলে দাবি করে নিজেকে এলডিপির নেতা হিসাবে দাবি করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে বলতে শুরু করেন। পরে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছি। ইয়াবা ব্যবসা ও আওয়ামী লীগের কোনো মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনো ছিল না, এখনো নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার কথার বিপরীতে প্রতিবেদক তথ্য উপস্থাপন করলে তার কণ্ঠস্বর নরম হয়ে আসে এবং তার সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। জসীম উদ্দিন বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে আমি প্রবাসে ব্যবসা করে সৌদি-দুবাইয়ে তিলে তিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমার কোনো হারাম বা অবৈধ টাকা নেই। চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসা এবং সাইফুল করিম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। দাবি করেন, সাইফুল করিমের সঙ্গে তার কোনোদিন দেখাও হয়নি। একপর্যায়ে প্রতিবেদককে টাকার বিনিময়ে সংবাদ না করার প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হলে মামলা করার হুমকি দেন বিতর্কিত এ ব্যবসায়ী।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT