সোমবার ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিইউএফএল জেটি ঘাটে সেই রাতে যা ঘটেছিল

প্রকাশিত : ০৯:৫২ পূর্বাহ্ণ, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার ১৬ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

অনেকটা নাটকীয়ভাবে চট্টগ্রামের ইউরিয়া সার কারখানা ঘাটে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিলের মধ্যরাতে অস্ত্রের বিপুল চালান জব্দের ঘটনা ঘটে। সেটি সিইউএফএল জেটিঘাট হিসেবে পরিচিত। ওই চালানে এত সংখ্যক অস্ত্র ছিল, যা ১০টি ট্রাকে করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দামপাড়া লাইনে নেওয়া হয়। এ কারণে এই ঘটনা গণমাধ্যমে ‘দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম চাঞ্চল্যকর অস্ত্র আটকের ঘটনা। পুলিশের তদন্ত ও অভিযুক্তদের জবানবন্দিতে ১০ ট্রাক অস্ত্রের নানা তথ্য উঠে আসে।

অস্ত্র খালাসের সময় সেই রাতে প্রথম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সার্জেন্ট আলাউদ্দিন। সেই রাতে চট্টগ্রামের বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির হাবিলদার গোলাম রসুলের টেলিফোন পেয়ে সেখানে পৌঁছান তিনি।

২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর আদালতে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন হাবিলদার গোলাম রসুল। তিনি জানান, ফাঁড়িতে থাকার সময় রাত আনুমানিক পৌনে ১১টায় একটি টেলিফোন আসে। এরপর নিজের পরিচয় দেন রসুল। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়েছিল, হাবিলদার সাহেব, সিইউএফএল জেটিঘাটে গিয়ে দেখেন ক্রেনের সাহায্যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ট্রাকে লোড করা হচ্ছে। তথ্যদাতার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে কিছু না বলে অন্য প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেওয়া হয়। এরপর দ্রুত বিষয়টি টেলিফোনে সার্জেন্ট আলাউদ্দিনকে জানান হাবিলদার রসুল। ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হন রসুল। এরপর পথেই সার্জেন্ট আলাউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তখন আলাউদ্দিনের মোটরসাইকেলে দু’জন ঘাটের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে গিয়ে দেখেন, জেটিঘাটে দুটি ট্রলার। আশপাশে বেশ কয়েকজন লোক। সেখানে সাতটি ট্রাক ও একটি ক্রেনও আছে। ক্রেনে টেনে ট্রলার থেকে বাক্সগুলো নামানোর পর ট্রাকে তোলা হচ্ছিল। যেসব শ্রমিক এই কাজে যুক্ত ছিল, তাদের কাছে বাক্সের ভেতরে কী রয়েছে– জানতে চাওয়া হয়। তাদের উত্তর ছিল, এসব মেশিনারি পার্টস। মালিক আশপাশে আছে। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এসব মালপত্রের মালিককে পাননি বলে জানান রসুল।

১ এপ্রিল রাতে হাবিলদার রসুল ও সার্জেন্ট আলাউদ্দিন ছাড়াও ঘটনাস্থলে হাজির হন পতেঙ্গা থানার কয়লার ডিপো পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন। ঘটনার চার দিন আগে হেলালকে বন্দর ফাঁড়ি থেকে কয়লার ডিপোতে এবং আলাউদ্দিনকে কয়লার ডিপো থেকে বন্দর ফাঁড়িতে বদলি করা হয়েছিল। আলাউদ্দিন ও হেলাল একই ব্যাচের হওয়ায় উভয়ের মধ্যে আগে থেকেই সখ্য ছিল।

সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা করে ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট আদালতে সাক্ষী হিসেবে সার্জেন্ট আলাউদ্দিন জানান, বাক্সভর্তি মালপত্রের মালিক খুঁজে না পেয়ে রাতেই তিনি পুলিশের তৎকালীন উপকমিশনার (বন্দর) আবদুল্লাহ হেল বাকীকে জানান। ডিসি নির্দেশ দেন, মালপত্রসহ ডেন ঘাট থেকে কোনো ট্রাক যেন বের হতে না পারে। এর পরই ডিসির নির্দেশে রাতে ঘাটে পৌঁছান সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন ও কর্ণফুলী থানার ওসি আহাদুর রহমান। পুলিশ সদস্যরা ঘাটের কাছে সাত থেকে আটজনের একটি জটলা দেখেন। তাদের মধ্যে দু’জন এগিয়ে এসে সার্জেন্ট আলাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেন। আদালতের সাক্ষ্যে আলাউদ্দিন বলেন, পরিচয় দেওয়া দু’জনের একজন হাফিজুর রহমান ও আরেকজন উলফা নেতা আবুল হোসেন বলে পরিচয় দেন। হাফিজুর রাগান্বিত হয়ে কথা বলতে থাকেন। হুমকি দিয়ে বলেন, বাক্সভর্তি মালপত্র অস্ত্র ও গোলাবারুদ। পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে সরে না গেলে ক্ষতি হবে। হাফিজুর ও আবুল হোসেন অস্ত্রের মালিক বলে দাবি করেন। অস্ত্রের চালান ছেড়ে দিতে চাপ দেন তারা। এরপর ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি উপকমিশনার আবদুল্লাহ হেল বাকীকে জানান। এর কিছুক্ষণ পর আরও পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন কর্ণফুলী থানার ওসি আহাদুর রহমান।

এক পর্যায়ে পুলিশের দুই সার্জেন্টের সঙ্গে আবুল হোসেনকে পরিচয় করিয়ে দেন হাফিজ। এরপর আবুলের দিকে ইঙ্গিত করে হাফিজ বলেন, ‘উনি উলফার নেতা। অস্ত্র তাদেরই।’ এসব অস্ত্রের কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা, তা পুলিশের দুই কর্মকর্তা জানতে চাইলে খেপে যান হাফিজ। ধমকের সুরে তিনি বলেন, কীসের কাগজ? এই অস্ত্র আসার খবর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবার জানা। এগুলো নামাতে বাধা দিলে আপনাদের ক্ষতি হবে।

এর পরই পুলিশ ও অস্ত্র খালাসকারীর মধ্যে তর্ক শুরু হয়। ঘাটের শ্রমিকরা একে একে সরে পড়তে থাকেন। বাদানুবাদের এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের বড় অঙ্কের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা সেটি নাকচ করেন। এরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসতে থাকেন। পরে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। অস্ত্র খালাসের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। প্রকাশ্যে আসে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের সেই ঘটনা।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

এই বিভাগের জনপ্রিয়

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।     বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন।  নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।  নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন।  তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।  বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।   এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে।  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

ইরানি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিককে দীর্ঘদিন বন্দি রাখার পর মুক্তি দিয়েছে তেহরান। ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে যুক্তরাজ্য ৪০ কোটি পাউন্ড ইরানের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তির পর নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। নাজানিন জাঘারি প্রায় ছয় বছর ধরে ইরানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। নাজানিন জাঘারি ও আনোশেহ আশোরিকে বহনকারী প্লেন অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ব্রিটিশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর আগে তারা ওমানে সাময়িক সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি নেন। তারা একসঙ্গেই প্লেন থেকে নেমে আসেন এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের পর পর উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়েন। এদিকে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা মোরাদ তাহবেজ নামে আরও একজনকেও কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুধবার তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ত্রাস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ বিষয় ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে ইরানের কাছে ইসলামি বিপ্লবের আগে অর্থাৎ প্রায় ৪৩ বছর আগের দেনা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তেহরানকে ৪০ কোটি পাউন্ড (৫২০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি নিশ্চিত করতে পেরে আমি খুব খুশি, নাজানিন জাঘারি এবং আনোশেহ আশোরিকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার দিন শেষ হয়েছে। তারা মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছে।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT