বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের মেয়াদ কি কমে যাচ্ছে

প্রকাশিত : ১০:৫৫ অপরাহ্ণ, ৩ জানুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার ৯ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

‘প্রচুর ঠান্ডা পড়ছে রংপুরে। আমাদের হাত-পা একেবারে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে’, বলছিলেন রংপুর সদরের চা বিক্রেতা রহিম মিয়া। অনেকটা একই অবস্থা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায়। আজ শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে সেখানে। খবর বিবিসি বাংলার

এরমধ্যেই সড়কে নেমেছেন স্থানীয় ভ্যানচালক জমশেদ উদ্দিন। বলেন, ‘ঠান্ডার জন্য ভ্যানে লোক ওঠে না। ইনকাম নাই। কীভাবে সংসার চালাবো।’

তীব্র শীতের প্রকোপে কুপোকাত দেশ। জানুয়ারির শুরু থেকেই বেশ ভালোভাবে শীত টের পাওয়া যাচ্ছে ঢাকায়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকেই শীত পড়ার প্রবণতা থাকলেও অনেকেই বলছেন এবার শীত খানিকটা দেরিতে এসেছে।

তবে এ কথার সঙ্গে অনেকটা ভিন্নমতই প্রকাশ করছেন আবহাওয়াবিদরা। বলছেন, দিন ও রাতের তাপমাত্রা এবং এই দুয়ের পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীত বেশি লাগছে।

এছাড়াও কুয়াশা, জলীয়বাষ্প এবং ভূপৃষ্ঠে সূর্যের আলো কতটা সময় থাকছে– এমন নানা ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে শীতের তীব্রতা। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতের সময়কাল খানিকটা কমে আসার বিষয়টিও উঠে এসেছে বেশ কিছু গবেষণায়।

আগের থেকে শীতের সময় কমে এসেছে

গত বছরের তুলনায় এ বছর শীতের পরিমাণ কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঘনকুয়াশার কারণে রাতের তুলনায় দিনের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে এবং মাসজুড়েই ঠান্ডাটা থাকবে।’

২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস কেমন যাবে তার একটি পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়েছে, ‘দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে এক থেকে দুইটি মাঝারি থেকে তীব্র এবং দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর শীত কমে আসবে বলেও জানান আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘আগের থেকে শীতের সময় কমে এসেছে। আগে দেখা যেত ডিসেম্বর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি শীত থাকতো। এখন দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বরে ওভাবে শীত আসে না। জানুয়ারিতে থাকে।’

কমে যাচ্ছে শীতের সময়কাল

শীতের সময়কাল কমে আসার বিষয়টি নিয়ে একাধিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৮৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়কালের আবহাওয়ার উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করেন কেনেথ কংকেল।

এতে দেখা যায়, দেশটিতে শীতের সময়কাল কমে আসছে। একইসঙ্গে শীতের সময় তুষারপাত ১০০ বছর আগের তুলনায় প্রায় এক মাস পর শুরু হচ্ছে। আর ১৯৭১ থেকে ১৯৮০ সালের তুলনায় ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালে এই সময়টা পিছিয়েছে এক সপ্তাহ। সব মিলিয়ে ১৯১৬ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের শীতকাল এক মাসেরও বেশি সময় কম ছিল।

গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলেই এমনটা হচ্ছে। আরেকটিই গবেষণায় দেখা গেছে, বাড়তে থাকা তাপমাত্রার কারণে পাহাড়ের উপরে তুষারপাত থাকার সময় কমে আসছে। এই তুষারপাত থেকে আসা পানির উপর নির্ভর করে লাখ প্রাণ বেঁচে থাকে।

‘আমাদের শীতকাল অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এর কারণও আমরা জানি।’ বলেন সান ডিয়াগোর দ্য স্ক্রিপস ইন্সটিটিউশন অব ওশেনোগ্রাফির গবেষক অধ্যাপক আমাতো ইভান। তিনিই এই গবেষণাটি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন, বাড়তে থাকা তাপমাত্রা।’

শীতের অনুভূতি কখন ও কেন বৃদ্ধি পায়

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শীতলতম মাস জানুয়ারি। তবে কুয়াশা বাড়ার কারণে বর্তমানে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ।

গত কয়েক বছরের শীতের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইদানীং শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু ঘনকুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে।’

কুয়াশা কেটে গেলে শীতের তীব্রতাও কমে আসবে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। একইসাথে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুরে হালকা বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান তিনি।

‘বৃষ্টি হলে ভালো। বৃষ্টি হলে যেটা হতে পারে যে ফগি কন্ডিশনে যে ময়েশ্চার আছে, সেটা কেটে যাবে। সে সময় আকাশ ক্লিয়ার হয়ে যাবে। বৃষ্টি না হলে কুয়াশাটা দীর্ঘ সময় কন্টিনিউ করে’, বলেন মি. রশিদ।

প্রান্তিক পর্যায়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই শীতের অনুভূতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকেলেও ডিসেম্বরে তা আট থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যেই ওঠানামা করে বলে জানাচ্ছিলেন আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

তিনি বলেন, লম্বা সময় ধরে ঘনকুয়াশা পড়লে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পড়ার সুযোগ পায় না। ফলে তা ভূমিকে উত্তপ্ত করতে পারে না এবং শীত বেশি লাগে। এর সঙ্গে সূর্যের দক্ষিণায়ন বা সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা কমে যাওয়াও শীত বাড়ার একটি কারণ।

তিনি আরও বলেন, ‘২৩ সেপ্টেম্বর দিন ও রাত সমান থাকে। এরপর থেকেই শুরু হয় সূর্যের দক্ষিণায়ন, অর্থাৎ বর্তমানে সূর্যের অবস্থান বঙ্গোপসাগরের ওপরে। ফলে ভূমির ওপর সূর্যের কিরণকাল বা সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা তীর্যকভাবে ভূভাগের ওপর পড়ে। ফলে বেশি শীত অনুভূত হয়।

এছাড়াও সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা সাধারণত আট থেকে ১০ ঘণ্টা হবার কথা। কিন্তু কুয়াশা বেশি হলে এবং বেশিক্ষণ থাকলে ভূপৃষ্ঠ সূর্যের আলো পায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। একারণেও বেশি শীত অনুভূত হয়, যোগ করেন তিনি।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT