সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
◈ ভারতে কমেছে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার, বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে ◈ বিশেষ বিসিএসে ৫০০ ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের দাবি, শাহবাগে মানববন্ধন ◈ সারা দেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৪৯২ ◈ সাবেক সেনাসদস্যদের বিক্ষোভ নিয়ে যা জানাল আইএসপিআর ◈ সকাল ৯টার মধ্যে ঢাকাসহ যেসব জেলায় ঝড়সহ বজ্রবৃষ্টির আভাস ◈ উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, বরখাস্ত হলেন প্রাথমিক শিক্ষক ◈ কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের ৩ নেতা কারাগারে ◈ যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন-সড়ক অবরোধ ◈ টর্নেডোর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র, প্রাণহানি বেড়ে ২১ ◈ ‘বলেন তো, আপনার স্বামী কয়জন’, মমতাজকে পিপি

রক্ত বেচে সংসার চালানো নাছিমা এখন কোটিপতি

প্রকাশিত : ০৬:০৯ পূর্বাহ্ণ, ২৩ মার্চ ২০২৫ রবিবার ২৮ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

পঞ্চম শ্রেণিতে থাকতে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন নাছিমা খানম। দাম্পত্যের ৬ বছরের মাথায় দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন স্বামী। তখন তিনি তিন সন্তানের জননী। গর্ভে অনাগত আরেক সন্তান। জীবিকা নির্বাহ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। শিশু সন্তানদের খাবার জোগাতে এক সময় নিজের রক্ত বিক্রি করতেন, বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। সন্তানদের ভাত খাইয়ে নিজে খেতেন ভাতের মাড়। ১০০ টাকা নিয়ে কুমিল্লা শহরে আসা এই সংগ্রামী নারী এখন কোটিপতি। যুব উন্নয়ন থেকে সেলাইয়ের কাজ শিখে এখন প্রতিষ্ঠিত নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে তার চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ৩০ জন কর্মী। কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছেন জাতীয় যুব পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা।

সম্প্রতি কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর হাজী প্লাজায় জুলি লেডিস টেইলার্সে গিয়ে কথা হয় নাছিমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে জন্ম আমার। ১৯৮৮ সালে স্বামীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তখন বড় ছেলের বয়স ৫ বছর, মেজো ছেলের বয়স ৪ আর ছোট ছেলের বয়স ছিল এক বছর। শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই না পেয়ে সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিই। অভাব-অনটনে ২ বছর পর সেখানে থাকাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

যোগাযোগ করি কুমিল্লা নগরীতে থাকা মাজেদা বেগম নামে দূরসম্পর্কের এক খালার সঙ্গে। তারই পরামর্শে ১৯৯০ সালে কুমিল্লা শহরে আসি।

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে নাছিমা বলেন, ওই সময় আমার কাছে ছিল মাত্র ১০০ টাকা। কুমিল্লা হাউজিং স্টেটে ছোট্ট একটি বাসায় উঠি চার সন্তান নিয়ে। সেখান থেকেই শুরু হয় জীবন সংগ্রামের দ্বিতীয় অধ্যায়। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি ও খাবার জোগাড় করতে শরীরের রক্তও বিক্রি করি। প্রতি ব্যাগ রক্ত বিক্রি করতাম ২০০ টাকায়। ১৫-১৬ ব্যাগ রক্ত বিক্রি করি। দুই ছেলেকে এইচএসসি আর এক ছেলেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছি। সড়ক দুর্ঘটনায় এক ছেলের মৃত্যু হয়।

কিছুদিন কুমিল্লা মেডিকেলে অস্থায়ীভাবে কাজ করি। সেখানে সীমিত আয় দিয়ে সন্তানদের ভরণ-পোষণ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। পরে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাসায় বসে সেলাইয়ের কাজ শুরু করি। এ কাজে আমাকে সহযোগিতা করত বড় ছেলে মাছুম রানা। বিরামহীন পরিশ্রম করি মা-ছেলে।

এই নারী উদ্যোক্তা আরও বলেন, কাজের মধ্যেই পরিচয় হয় এক নারী সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে। কাজ পছন্দ হওয়ায় আমাকে টেইলার্সের দোকান দিতে উৎসাহ দেন তিনি। পরে কুমিল্লা নিউ মার্কেটে আমিন টেইলার্স নামে একটি দোকান ভাড়া নিই। দোকানে আগে থেকেই মেশিন ও কাটিং টেবিল থাকায় মাত্র একটি কাঁচি আর ফিতা নিয়ে শুরু হয় আমার নতুন অধ্যায়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জুলি টেইলার্সটিতে আমি নিজেই বসি। এখানে রয়েছেন ১০ জন কর্মী। আর রেসকোর্সের তিনটি দোকান ও কারখানায় রয়েছেন আরও ২০ জন কর্মী।

নাছিমা জানান, মনোহরপুরের দোকানটির আয় থেকেই কুমিল্লা শহর ও গ্রামের বাড়িতে জমি কিনেছেন তিনি। বর্তমানে তার দেড় কোটিরও বেশি টাকার সম্পদ রয়েছে। ২৫০ জনের বেশি বেকার নারীকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারাও এখন আত্মনির্ভরশীল।

কুমিল্লার তরী সামাজিক বুননের সমন্বয়ক রেজবাউল হক রানা বলেন, জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পরিশ্রম, সততা ও একাগ্রতার মাধ্যমে মানুষের সাফল্য কেউ ঠেকাতে পারে না। সেটাই প্রমাণ করেছেন কীর্তিমান মা খেতাব পাওয়া নাছিমা।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT