বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
◈ ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ◈ একুশেই মিলবে স্টার্টআপ ঋণ, সুদ হার মাত্র ৪ শতাংশ ◈ আলিম ও কারিগরি এইচএসসির সারাদেশের পরীক্ষা স্থগিত ◈ কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের কালকের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত ◈ গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তকারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র ◈ ট্রাম্পের সমালোচনার পর ইউক্রেনে রাশিয়ার রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা ◈ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ◈ নিহতের ফোনের ভিডিওতে মিলল ৫ আগষ্ট হত্যাকাণ্ডের চিত্র ◈ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে দুর্ঘটনায় চীনা প্রকৌশলী নিহত ◈ ফেনীতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত, নেই বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ হতে পারে

প্রকাশিত : ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ, ১৩ জুন ২০২৫ শুক্রবার ৩২ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দিয়েছে। সমালোচনার মুখে সরকার এই সুযোগ বাতিলের চিন্তাভাবনা করছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হলেও তাতে রাষ্ট্রের আহামরি কোনো লাভ হয় না। উল্টো নব্য কোটিপতিরা কিছু সুবিধা নিতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে এবং এই সুযোগ বাদ দেওয়ার জন্য চাপ রয়েছে। বিষয়টি হয়তো বাদ দেওয়া হতে পারে সংশোধিত বাজেটে। তবে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাননি তারা।

বিগত সরকার প্রায় প্রতি বছর বাজেটে নানা কৌশলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে এসেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। ক্ষমতার পালাবদলের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৯ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সুযোগ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২ সেপ্টেম্বর এনবিআর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে সে সময় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেস ও ভূমি আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত থাকলে তা নির্ধারিত হারে আয়কর দিয়ে বৈধ করার বিধানটি বহাল রাখা হয়। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাড়িয়ে কিছু কাটছাঁট করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নিয়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। আগামী অর্থবছরে আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখার প্রস্তাব এসেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে তিন থেকে পাঁচ গুণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত কর ব্যবস্থায় সরকার ব্যক্তি পর্যায়ে নির্ধারিত বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে ভবন, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ রেখেছে, যদিও করের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে আসছি, অবৈধ অর্থ বৈধ করার এ ধরনের সুযোগ সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। কর কর্তৃপক্ষের কর আইন ও বিধিমালা প্রয়োগের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। অতীতে এ ধরনের বিধান দেওয়া সত্ত্বেও যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়নি। যদি কোনো সরকার অবৈধ আয়কে বৈধতা দিতে চায়, তবে তা কঠোরভাবে এককালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’

কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখার তীব্র সমালোচনা করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশও (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্র সংস্কার—বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে রীতিমতো উপেক্ষা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে দুর্নীতিকে উৎসাহ দিয়ে রিয়েল এস্টেট লবির ক্ষমতার কাছে সরকার আত্মসমর্পণ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসব সমালোচনার মুখে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার, যার ইঙ্গিত মিলেছে এনবিআর কর্মকর্তাদের কথায়। তারা বলছেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দেওয়ায় বিষয়টি বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এর আগে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। একই অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান জানান, সরকার না চাইলে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকার বিনিয়োগ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তবে আগের বাজেটগুলোতে বিনা প্রশ্নে সাদা করার সুযোগ এ বাজেটে রাখা হয়নি। সরকার চাইলে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে আয়কর বিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে । তারা বলেন, কালো টাকার বিধান বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। তবে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি বাতিলও হতে পারে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, দেশে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা সাদা হয় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে। সেই সময়ের সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০০৮) প্রযোজ্য করসহ বছরপ্রতি ১০ শতাংশ হারে (সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ) জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন বা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল। সে সময় এ খাত থেকে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব পেয়েছিল সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বাধিক ২০ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা সরাসরি বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছিল। ওই অর্থবছরেও ৯৮ শতাংশ করদাতা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঘোষণার মাধ্যমে টাকা সাদা বা বৈধ করার সুযোগ নেন।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT