মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
◈ ঢাকায় গাইবেন পাকিস্তানি গায়িকা আইমা বেগ ◈ ইস্তাম্বুলের মেয়রকে কারাগারে পাঠালো তুরস্কের আদালত, বিক্ষোভে উত্তাল দেশ ◈ গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল ◈ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চীনে বৈঠকে যাচ্ছে বিডা ◈ এপ্রিলে শুরু হচ্ছে স্টারলিংক ইন্টারনেটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম ◈ ট্রাম্পের ‘দখল’ হুমকির মধ্যেই, কানাডায় আগাম নির্বাচনের ঘোষণা ◈ গত কয়েক দিনে ছাত্র নেতাদের বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে: নুর ◈ ক্যান্সার রোগীদের পাশে ReVouge ও উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশন ◈ নাটক বন্ধ করেন, নির্বাচন কবে বলেন: মাসুদ কামাল ◈ ৩ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন

এক গুলিতে শেষ মিরাজের সব স্বপ্ন

প্রকাশিত : ০৯:৩০ পূর্বাহ্ণ, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার ৩৭ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ ডেক্স :

ইচ্ছা ছিল রোজগার করে বাবাকে ভালো ডাক্তার দেখানো। ছোট ভাইদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। তাই সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট থেকে রাজধানীতে ছুটে এসেছিলেন মিরাজ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে রাস্তায় নামেন মিরাজও। এরপর এক গুলিতে শেষ হয়ে যায় তার সব স্বপ্ন!

একুশের তরুণ মিরাজের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামে। ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মাছের আড়ত এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। মিছিলে তার সঙ্গে ছিলেন খালাতো ভাই কারখানা শ্রমিক মাজেদুল ইসলামও (২৮)। পুলিশ অতর্কিতভাবে মিছিলে গুলি চালায়। আর সেই গুলিতেই মিরাজ ও তার খালাতো ভাই মাজেদুল গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সুচিকিৎসা ও টাকা-পয়সার অভাব দেখা দিলে তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে মিরাজের খালাতো ভাই মাজেদুল ইসলাম চিকিৎসা নিয়ে অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন। অন্যদিকে অস্ত্রোপচার করে মিরাজের শরীর থেকে গুলি বের করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে আর বাঁচানো যায়নি। ৮ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্বপ্নবাজ এ তরুণ।

আব্দুস সালাম ও মহসেনা বেগমের বড় ছেলে মিরাজ। মেজবাউল ইসলাম (১৭) ও সিরাজুল ইসলাম (১৪) নামে তার দুজন আরও ছোট ভাই রয়েছে। মেজবাউল নবম শ্রেণিতে ও সিরাজুল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মিরাজের বাবা অসুস্থ।

মিরাজ মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে পরিবার নিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য ঢাকায় আসেন। যাত্রাবাড়ী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত মিরাজের পরিবার। পরে মিরাজ ঢাকার দনিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার মাতুয়াইল রশিদবাগে স্থানীয় একটি মোবাইল রিচার্জ ও বিকাশের দোকানে তিনি কাজ নেন।

অসুস্থ বাবার চিকিৎসা আর ছোট দুই ভাইয়ের লেখাপড়াসহ পুরো সংসার চলত মিরাজের আয়ে। বাবার চিকিৎসার জন্য ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণও করেছে মিরাজ ও তার বাবা। সংসারের হাল ধরতে লেখাপড়ার পাশাপাশি দোকানে কাজ করতেন মিরাজ।

মিরাজের বাবা আব্দুস সালাম বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর পর আমাদের একেকটা দিন যেন একেকটা বছর।’

তিনি আরও বলেন, আমি সিএনজি চালাতাম। পরে ঘন ঘন অসুস্থ হওয়ার কারণে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার হয়েছে বলে ধারণা করছেন। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। এজন্য অনেক টাকা লাগবে। অথচ আমাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেটি আর নেই। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে আমার পুরো পরিবারের উপার্জনের চাকা।

আর্থিকভাবে সাহায্য পেয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে মিরাজের বাবা বলেন, হ্যাঁ, আর্থিকভাবে সাহায্য পেয়েছি। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আমার পরিবারকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ও (নেভি) হেডকোয়ার্টার ঢাকা থেকে আরও ১ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত আমি তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় দেখতে চাই। বর্তমান সরকারের প্রতি এ ব্যাপারে আমার অনুরোধ থাকল।

মিরাজের মা মোহসেনা বেগম বলেন, আমার কলিজার টুকরা আর ফিরে আসবে না, এটা ভেবেই দুচোখের পাতা এক হয় না।

মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, মিরাজ প্রতিভাবান ছিল। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতার সব রকম ব্যবস্থা করব। খবর বাসসের।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি anusandhan24.com'কে জানাতে ই-মেইল করুন- anusondhan24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

anusandhan24.com'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। anusandhan24.com | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বে-আইনি, Design and Developed by- DONET IT